উপদেষ্টারা আন্দোলনের মধ্যে বিভাজনরেখা তৈরি করছেন: রিজভী

ফ্যাসিবাদ বিরোধী এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে সরকারের উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে সারা দেশে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের যে চূড়ান্ত আন্দোলন, এটা তো ১৫ বছরের যে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন করেছেন তার চূড়ান্ত বর্হিঃপ্রকাশ। এই ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস নেই, চৌধুরী আলম নেই, সুমন নেই, অদৃশ্য করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে। কারণ এরা সোচ্চার ছিলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি ঘটাতে। এই কারণে ওরা জীবন দিয়েছে, সেই জীবনের একটা চূড়ান্ত বর্হিঃপ্রকাশ দেখলাম শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে তারা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।

তিনি বলেন, আমি উপদেষ্টা সাহেবদেরকে বলব যে, আপনারা এই ১৫ বছর ১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? এটা তো সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এবং মোহনার এই মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছে।

রিজভী বলেন, আপনাদেরকে (উপদেষ্টারা) বলব যে, আপনারা যে ক'দিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখন তো মিনিকেট চালের কেজি ৮৫ টাকা, এদিকে আপনারা নজর দিন, পাইজাম আর ঝর্ণা চাল, একেবারে মোটা চাল সেটার দাম ৫৬/৫৭ টাকা, বিআর-২৮ সেটার দাম ৬২/৬৫ টাকা-এগুলোর দিকে নজর দিন।

তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি প্রধান উপদেষ্টা, মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমরা চাই, আপনার হাত দিয়ে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। আপনি যে ক'দিন ক্ষমতায় থাকবেন, আপনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, এই ধরনের গভীর বিশ্বাস জনগণের। কিন্তু যদি গড়িমসি হয় তাহলে তো ভিন্ন মাত্রা নেবে।

রিজভী বলেন, আপনাদের এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছেন, যেভাবে তোমরা চালাচ্ছো আমাদেরকে, এভাবে পাঁচ বছর চললে দেশ আরও সুন্দর হবে। তার মানে নির্বাচনের দরকার নাই। গণতন্ত্রের আরও যে নিশ্চয়তাগুলো আছে, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এটা তো গণতন্ত্রের উপাদান। গণতন্ত্রের এসব উপাদানগুলো কি শেষ হয়ে যাবে? আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই। কী সবক দিচ্ছেন? তাদেরকে তো ফ্যাসিবাদ অথবা ডিকটেটরশীপের দিকে আপনারা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এটা তো ঠিক নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আপনারা দেখেছেন, নুসরাত পারুল থেকে শুরু করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একের পর এক নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে, যারা ধর্ষণকারী তাদের কোনো বিচার হয়নি, এমনকি হত্যাকারী যারা তাদের কোনো বিচার হয়নি। কারণ যারা গুম-খুন-হত্যা করেছিলো তারাই কিন্তু সেই সময়ে রক্ষক হিসেবে অন্যদেরকে দিয়ে কাজগুলো করাতো। আজকে আমরা এমন একজনের কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি যাকে আমরা মনে করি শান্তির প্রতীক। আমরা জানি ড. ইউনূস, তার কাছে আশা করছি, আমাদের দেশ নিরাপদে থাকবে, আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে থাকবে, সবাই মুক্ত স্বাধীন কথা বলতে পারবে।

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।