বিশ্বজমিন
ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিককে কুখ্যাত সিকোত কারাগারে পাঠালেন ট্রাম্প
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ১৭ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:০৮ অপরাহ্ন

আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভেনেজুয়েলার ২ শতাধিক নাগরিককে এল সালভাদরের কারাগারে পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আটককৃতরা সকলেই ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্য বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ভয়াবহ অপরাধী ওই গ্যাং সদস্যদের কুখ্যাত সিকোত কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, রোববার সকালে আন্তর্জাতিক এমএস-১৩ গ্যাংয়ের ২৩ সদস্যের সাথে ভেনেজুয়েলার গ্যাং ট্রেন ডি আরাগুয়ার (টিডিএ) ২৩৮ সদস্য মধ্য আমেরিকার ওই দেশটিতে পৌঁছেছেন। পরে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে এল সালভাদরের কুখ্যাত মেগা কারাগার সিকোতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মার্কিন সরকার বা এল সালভাদর কেউই আটককৃতদের পরিচয় শনাক্ত করেনি। এছাড়া তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা গ্যাং সদস্যপদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও দেয়নি।
এভাবে নির্বাসন অমানবিক উল্লেখ করে তা স্থগিত করতে রায় দিয়েছিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের এক বিচারক। তবে সেই রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই অপরাধীদের নিয়ে বিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে। ফলত সেই রায় কার্যকর হয়নি। এদিকে বিচারকের রায়ের কথা উল্লেখ করে বুকেলে তার পোস্টে লিখেছেন, ওপস! বেশ দেরি হয়ে গেল। তার পোস্টের সঙ্গে যুক্ত করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজনের হাত-পা শিকলে বেঁধে এক লাইন করে বিমান থেকে নামিয়ে আনছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট। তিনি বলেছেন, প্রশাসন আদালতের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়নি। আমেরিকার ভূখণ্ড থেকে টিডিএ-এর সন্ত্রাসীদের পাঠিয়ে দেয়ার পর বিচারক ওই আদেশ জারি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার এক ঘোষণায় ১৭৯৮ সালের এলিয়েন অ্যানিমিস অ্যাক্ট প্রয়োগ করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি ট্রেন ডি আরাগুয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে হামলা চলানোর হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেদিন তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনিয়মিত যুদ্ধে লিপ্ত থাকার অপরাধে ওই গ্যাং সংসদস্যদের নির্বাসিত করা হবে। ১৭৯৮ সালের ওই আইনটি সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান-আমেরিকান বেসামরিক নাগরিকদের আটকের সময় ব্যবহার করা হয়।
ট্রাম্পের ওই আইন প্রয়োগের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলার সরকার। তারা বলেছে, ওই আইন ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী হিসেবে আখ্যা দেয়। মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার পর্বগুলোকে উস্কে দেয়। দাসপ্রথার যুগ থেকে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ভয়াবহতার কথা মনে করিয়ে দেয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়েছে। অভিযোগ করে বলেছে, ট্রাম্প ২২৭ বছরের পুরোনো আইন ব্যবহার করে যথাযথ প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ তাদের এক্সের এক পোস্টে লিখেছে, ত্রাণবাহিনীর সঙ্গে জড়িত থাকার ভিত্তিতে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদের আরেকটি উদাহরণ।
আটককৃত ওই গ্যাং সদস্যদের সিকোতে এক বছর রাখা হবে বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট বুকেলে। পরে সময় আরও বাড়নো হতে পারে। দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গ্যাং সদস্যদের ধ্বংস করতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সিকোত বা টেরোরিজম কনফাইনমেন্ট সেন্টার তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বুকেলে। এই করাগারটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বেশ কুখ্যাত। এখানে এক সঙ্গে ৪০ হাজারের বেশি অপরাধী আটক রাখা যায়। সার্বক্ষণিক কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে অপরাধীদের ওপর নজরদারি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং এল সালভাদরের মধ্যে সিকোত নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যার মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এল সালভাদর দ্বিতীয় দেশ যেখানে দায়িত্ব পাওয়ার পরই সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।