প্রথম পাতা
এত দাম বৃদ্ধি অকল্পনীয়
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
দেশে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনে আরও দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসবে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম। এত পরিমাণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও অকল্পনীয় অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। মানুষের ওপর আরও চাপ পড়বে, পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। শুক্রবার রাতে দেশে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এসব কথা বলেন। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমতির দিকে, তখন বাংলাদেশে দাম বৃদ্ধি করা হলো। ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। ৮০ টাকা লিটারের ডিজেল ও কেরোসিন এখন ১১৪ টাকা। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ১৪০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা এখন কম বেশি ৯০ ডলারে নেমে এসেছে।
৫ই আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজার এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ৮৯ থেকে ৯৫ ডলারের মধ্যে।
এসব জিনিস বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে গণশুনানি হয়। কিন্তু তেলের দামের ক্ষেত্রে এই লুকোচুরিটা কেন? হঠাৎ করে গভীর রাতে ভোক্তা পর্যায়ে কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে হুট করে ইচ্ছেমতো একটা দাম নির্ধারণ করে দিলাম। এটাকে আমি মোটেও সুষ্ঠু একটা ব্যবস্থাপনা মনে করি না। বিশ্ববাজারে তেলের দাম এখন নিম্নমুখী। আর এই যে সমন্বয়ের কথা ওনারা বারবার বলেন, কিন্তু তেলের দাম যখন দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম ছিল আমরা তো কম দামে তেল কিনিনি। ওই টাকা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে লাভের কতো টাকা জমা আছে বিপিসি’র কাছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেই টাকাটা কি সমন্বয় করা যায় না? সেটা না করে এতটা বাড়ালো কেন? লিটার প্রতি ডিজেলে বাড়িয়েছে ৩৪ টাকা। ১ লিটারে ৩৪ টাকা দাম বৃদ্ধি করা যেনতেন ব্যাপার না। অকটেনে বাড়িয়েছে ৪৬ টাকা, পেট্রোলে বাড়িয়েছে ৪৪ টাকা। এটা কোনো বিবেচনাতেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে তিনি মনে করেন। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পেট্রোল, অকটেন আমাদের খুব একটা আমদানিও করতে হয় না।
তবুও দাম বাড়ানোর সময় সব তেলের দামই বাড়ানো হয়। তাই বলে এতটা বাড়ানো হবে? আমি বলবো, মানুষের প্রতি অবজ্ঞা থেকে এসেছে এমন সিদ্ধান্ত। মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে জ্বালানি তেলের মূল্য এতটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের অবস্থা আর্থিকভাবে যে কতোটা সংকটপূর্ণ সেটাতো সরকারের বিবেচনায় থাকা দরকার ছিল। কিন্তু, তেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তাতে মনে হয় না যে, তাদের এই বিবেচনাটা খুব একটা আছে। দাম বাড়ানোর এই বিষয়টাই তো আমরা দেখছি যে ঘোলাটে করে দিয়েছে সরকার। প্রথম কথা এই প্রশ্ন করাই যায় এতটা দাম বৃদ্ধি কেন? বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১৪০ ডলার থেকে কমে ৯০ ডলারে চলে এসেছে। দাম আবার হয়তো বাড়তে পারে। কিন্তু দাম আগামীতে যদি আরও কমে যায়? সরকার তো একবার দাম বাড়িয়ে দিলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আর দেশের বাজারে দাম কমান না। তেলের দামের কারণে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
পাঠকের মতামত
এই আওয়ামী সরকারের আসল রূপ এদেশের মানুষের দেখার দরকার ছিল। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী না ।
আশা করছি এটাই তাদের পতনের শুরু।
মানুষের প্রতি অবজ্ঞা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া কুইক রেন্টাল, ব্যাংকিং সেক্টর, মেগা প্রজেক্ট গুলোতে যে, ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে, তা সামাল দেয়ার জন্য এই মুল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
তেলের দাম বৃদ্ধি এটা রাজনৈতিক কৌশল বলেই আমরা সাধারণ মানুষ হিসাবে মনে করি। মানুষকে তটস্থ রাখারও এটা একটা কৌশল হতে পারে।
বিশ্বের দেশে দেশে জ্বালানির দাম যখন কমছে তখন বাংলাদেশ বাড়াচ্ছে । এর প্রভাব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সব ক্ষেত্রেই পড়বে । দ্রব্যমূল্য বাড়বে । জীবন ধারণের ব্যয় বাড়বে । শিল্পোৎপাদন কমবে । রপ্তানি আয় কমবে । তৎসঙ্গে লোডশেডিং শিল্পোৎপাদন সংকুচন তড়ান্বিত করবে । ধীরে ধীরে হাটি হাটি পা পা করে শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করা হচ্ছে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য।