দেশ বিদেশ
নিলামের পাথর নিয়ে কানাইঘাটে উত্তেজনা, সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
প্রায় ৩ বছর আগেই লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ৫০ লাখ ফুট পাথর জব্দ করে রেখেছিল প্রশাসন। এই পাথর থেকে কিছু অংশ গত তিন বছরে লোপাট হয়েছে। স্থানীয়রা নানাভাবে এই পাথর লুট করে নিয়ে যান। অবশিষ্ট যে পাথর আছে সেগুলো ইতিমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই ইজারা নিয়ে কানাইঘাটের উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাথর মালিক শ্রমিকদের একাংশের সঙ্গে বিএনপি’র একাংশের নেতারা অবস্থান নিয়েছেন। পাথর জনগণের সম্পদ দাবি করে তারা ইজারা হওয়া পাথর সরিয়ে নিতে বাধা দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অপর অংশের নেতাদের দাবি; বিনামূল্যে শেয়ার না দেয়ার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি করছেন। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে স্থানীয় সুরইঘাট বাজারে বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কোয়ারির ৪৫ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতে সীমান্তবর্তী সুরইঘাট বাজারে এ সংঘর্ষ হয়। এতে দু’পক্ষের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে পাল্টাপাল্টি মিছিল বের করে। উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের ছোড়া ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৪ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহতরা ইজারাদার অংশের ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সুরইঘাট বাজারে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। জব্দকৃত ৪৫ লাখ ঘনফুট পাথরের নিলাম পায় সিলেটের পিয়াস এন্টারপ্রাইজ। নিলামের বিপক্ষে অবস্থান নেন বিএনপি একাংশের নেতারা। অপরদিকে নিলামদাতা পিয়াস এন্টারপ্রাইজের লোকজনদের পক্ষ নেন নিলামকৃত পাথর পরিবহনের পক্ষে বিএনপি’র একাংশসহ পাথর ব্যবসায়ীরা। বিকালের দিকে পাল্টাপাল্টি মিছিল বের করে দুই পক্ষ। এই মিছিলের জের ধরে রাতে লাঠিসোটা নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত ৪ জনকে ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা বা অভিযোগ আসেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ইজারাদারদের পক্ষে থাকা পাথর ব্যবসায়ী আলমগীর, নাসির, এবাদ মেম্বার, নজরুলসহ কয়েকজন জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রকাশ্য প্রায় ২৫ কোটি টাকায় ৪৫ লাখ ফুট পাথর কেনা হয়েছে। ওই পাথরের টাকা এখনো পুরোপুরি জমা হয়নি। তবে বেশির ভাগ টাকা জমা হয়েছে। নিলামে নেয়ার পর কানাইঘাটের ব্যবসায়ীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে শেয়ারের মাধ্যমে শরিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। যারা নিলামে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সেসব ব্যবসায়ীদের একীভূত করার চেষ্টা চালানো হয়। অনেকেই এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা আশিক চৌধুরীসহ কয়েকজন শেয়ারে শরিক না হয়ে পাথরে মালিকানায় নিজেরা ভাগ বসাতে চান। এ নিয়ে তিনি ইজারাদার অংশের সঙ্গে কয়েকজন তার সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ ও বৈঠকও করেন। কিন্তু আশিক চৌধুরীসহ কয়েকজন পুঁজির মাধ্যমে শেয়ার নিতে চাননি। উল্টো তারা ঘোষণা দিয়েছেন এই পাথর আটকে দেবেন। তারা বলেন, সরকার যেহেতু বৈধভাবে লিজ দিয়েছে সেহেতু তারা পাথর সরিয়ে নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইবেন। তবে যাতে কোনো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে তাদের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হবে। তবে কানাইঘাট উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী নিলামকৃত পাথরে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, পাথর নিয়ে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। রাজনৈতিক ভাবে সুরইঘাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তাকে বিতর্কিত করতে এখন পাথরের ইস্যুটি সামনে আনা হচ্ছে। এটি একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে করছে বলে দাবি করেন আশিক চৌধুরী।