ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

গ্রাহকের অপেক্ষায় পার্লার

মেহনাজ শাহরিন অর্থি
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

ফাইল ফটো

রূপচর্চা নারীর ভূষণ। আর এই রূপচর্চার জন্য দেশের একটি শ্রেণি নিয়মিত পার্লারে যেতেন। মনের মতো করে সাজাতেন। গত দুই দশকে রাজধানীসহ দেশের সকল শহরে গড়ে ওঠে পার্লার। আর এসব পার্লারে ভিড় লেগেই থাকতো। কোথাও কোথাও আগে থেকে সিরিয়াল দেয়া লাগতো। কিন্তু ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর পার্লারগুলোতে আগের সেই ভিড় নেই। কাজও কমে গেছে অনেক। ইতিমধ্যে কোনো কোনো পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে কাস্টমারের অভাবে।  বর্তমানে যে কাজ হয় কোনো উৎসব পার্বণ কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে। কিন্তু তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে।  ফলে পার্লার ব্যবসায়ীরা হতাশ। অফিস ভাড়া, কর্মী খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। মিরপুর পার্সোনা ইনস্টিটিউট অব বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইলে কর্মরত শারমিন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার পার্লারটা আগে বেশ ছোট ছিল। একসময় গ্রাহকের চাহিদা বাড়তে থাকায় আস্তে আস্তে গুলশান, ধানমণ্ডিসহ রাজধানীতে পার্লারের শাখা খুলি। রমরমা ব্যবসা চলতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে ৫ই আগস্টের পর থমকে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো। দিনে দিনে গ্রাহক কমতে থাকে। এখন অফিস ভাড়াসহ নানা খরচই উঠে না। আগে শুক্র ও শনিবার যেখানে কাজের জন্য ফুরসত পাওয়া যেতো না। এখন এ দুই দিনও গ্রাহকের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হয়।  যারা আসে তারাও শুধু ১৫০ টাকা দিয়ে ভ্রু প্লাক করার জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে চুলের চিকিৎসার জন্য বা চুলকে আরও আকর্ষণীয় করার খরচ পড়ে ১৬ বা ১৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া ত্বকের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকি আমরা। সেগুলোতেও প্রায় ৫ হাজারের মতো খরচ পড়ে। কিন্তু এই ধরনের ব্যয়বহুল কাজের জন্য এখন আর তেমন কেউ আসে না। পার্সোনাতে কর্মরত আরেকজন কর্মী বলেন, সামনে পহেলা ফাল্গুন। আশা করছি, তখন কিছু গ্রাহক আসতে পারে। 

পার্সোনাতে ভ্রু প্লাক করতে আসা ফারিয়া নামের এক তরুণী বলেন, ভ্রু প্লাক না করলেই নয়, তাই এটা করতে আসি। না হলে তো এটাও করতাম না। আগে পরিবারে সচ্ছলতা ছিল, তখন পার্লারে এসে অনেক কিছু করতাম। কিন্তু আগস্টের পরে আমার বাবার ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারণে পরিবারে আগের মতো সেই সচ্ছলতা নেই। পরিস্থিতি আবার আগের মতো না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। এ ছাড়া আরেকজন নারী বলেন, বাজারে প্রত্যেক জিনিসের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে বেঁচে থাকাই তো দায়। এমন পরিস্থিতিতে পার্লারের পেছনে বিলাসিতা করার মতো অবস্থা নেই বললেই চলে।
লিঙ্গারইং লুকের শাখা ব্রাঞ্চ ধানমণ্ডিতে গিয়ে জানা যায়, শুধু ৫ই আগস্টই নয়, বরং তার আগে থেকে অর্থাৎ জুলাই  থেকেই ভিড় কমে গিয়েছিল। যদিও জুলাই এর দিকে কোনো সেবাপ্রার্থীরা ছিল না। এমনকি আগস্টের পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কোনো সেবাপ্রার্থী ছিল না বললেই চলে। তবে নতুন বছরের জানুয়ারিতে এসে কিছু মানুষ পার্লারে ফের আসা শুরু করে। লিঙ্গারইং লুকে কর্মরত একজন বলেন, ধানমণ্ডিতে আমাদের এই ব্রাঞ্চটা নতুন। তবে মোহাম্মদপুরে আমাদের প্রধান ব্রাঞ্চে সেবাপ্রত্যাশীদের সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে।  আশা করছি এই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে সমস্যা হলো বেশি বাজেটের সেবাগুলো নিতে গ্রাহকরা অনাগ্রহী। কারণ হিসেবে তাদের আর্থিক সংকট অনেকটা দায়ী। আর যেসব নারী গৃহিণী কিংবা পড়াশোনা করে তাদের পার্লার খরচটা সাধারণত পরিবার থেকেই নিতে হয়। আর যখন সেই পরিবারেই আর্থিক টানাটানি থাকে, তখন আর কেউ পার্লারের পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না। এখানে কর্মরত আরেকজন কর্মী বলেন, জুলাই-আগস্টের পর আমাদের পার্লারগুলো শুধু নয়, বরং সব পার্লারগুলোতেই এক রকম ধস নামে। যেটা আস্তে আস্তে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।  

এখানে আসা রেহানা নামে একজন সেবাপ্রত্যাশী বলেন, ৫ই আগস্টের পর সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ। তবে এটা সাময়িক। যেটা কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লাগলেও একটা সময়ে কাটিয়ে ওঠা ঠিকই সম্ভব। কিন্তু আমাদের মতো যারা প্রতি মাসে নিজের ত্বক, মুখ বা চুলের যত্নে পার্লারে আসেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা এক রকম প্রতিদিনের রুটিনের মতো হয়ে গেছে। তাই আর্থিকভাবে কিছুটা সংকট মোকাবিলা করলেও সেই সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে ওঠার পর আবারো এসেছি।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status