দেশ বিদেশ
১৫ বছর পর মুক্তি পাচ্ছেন ২৫০ জোয়ান
স্টাফ রিপোর্টার
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার১৫ বছর আগে হওয়া বিডিআর হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে খালাস পাওয়া এমন প্রায় ২৫০ বিডিআর জোয়ান বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়েছেন। রোববার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক ইব্রাহীম মিয়া এই জামিন আদেশ দেন। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালত এবং ২০১৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এসব জোয়ান জামিন পেলেও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় মুক্তি মিলছিল না।
আদালতে আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদন করেন এডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম, এডভোকেট মো. পারভেজ হাসানসহ কয়েকজন আইনজীবী। তারা আসামিদের জামিন আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, যে সব আসামি বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিডিআর হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন এবং ১০ বছরের বেশি সাজা ভোগ করেছেন তাদের জামিন মঞ্জুর করা হোক। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. বোরহান উদ্দিন আদালতকে বলেন, তাদের (আসামিপক্ষের আইনজীবীদের) দাখিল করা জামিন আবেদনে ত্রুটি আছে। তারা আবেদনে ক্লিয়ার করতে পারেনি কোন কোন আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন, খালাসপ্রাপ্তরা বিস্ফোরক মামলার আসামি আছেন কিনা তা পরিষ্কার করেনি। এটা আরও স্কুটিনি করে বের করা লাগবে এমন আসামির সংখ্যা কতো। পরে আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পৌনে এক ঘণ্টার বিরতি শেষে আদালত জামিন আদেশ দেন। আদেশের সময় আদালত বলেন, খালাসপ্রাপ্তদের নাম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দু’দিন পর জামিননামা দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২৭৮ জনকে খালাস দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরমধ্যে ৬৯ জনের খালাসের রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরমধ্যে ২০ জনের খালাসের রায় বাতিল হয়। এডভোকেট আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, হত্যা মামলায় যারা নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন এবং যাদের ক্ষেত্রে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেনি এবং তাদের হাইকোর্ট পর্যন্ত আর কোনো সাজা নেই, এমন ২৫০ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। যাদের জামিন দেয়া হয়েছে, সঠিকভাবে তাদের তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে জামিননামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ই ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পিপি বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় কতো জন আসামি জামিন পেয়েছেন, সেটি নির্দিষ্ট করে এখন বলা সম্ভব নয়। উচ্চ আদালত থেকে হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ সময় আনন্দে স্বজনদের কাঁদতে দেখা যায়। এর আগে আসামিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করেন।
প্রিয়জনদের জামিনের প্রার্থনায় মোনাজাত করেন তারা।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের একদল বিপথগামী সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ২৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে বিডিআর হত্যা মামলাই সবচেয়ে বড় মামলা। ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগেই চার আসামি মারা যান।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭শে নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। ২০২০ সালে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান।
হাইকোর্টের দেয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের সাজা কমেছে এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগে এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
পাঠকের মতামত
সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের বিজিবিতে বিশেষ নিয়োগ ও প্রশিক্ষন দেয়া হোক ।