দেশ বিদেশ
শ্রম খাতে অভিন্ন মজুরি কাঠামোর সুপারিশ সিপিডি’র
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার
শ্রম খাতের জন্য একটি অভিন্ন মজুরি কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশে অভিন্ন একটি শ্রম আইন প্রণয়ন। বর্তমান শ্রম আইনে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) অন্তর্ভুক্ত নয়। ইপিজেড আইন নামে সেখানে ভিন্ন আইন রয়েছে। যেখানে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ নেই।
রোববার সকালে ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করা হয়। ঢাকার ধানমণ্ডিতে সিপিডি’র কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ। সিপিডি’র প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি দেশের ৮৫ ভাগ বা প্রায় ৬ কোটি শ্রমিকের কোনো আইনি সুরক্ষা ও মজুরির মানদণ্ড না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সৈয়দ সুলতান বলেন, আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে ৮৫ ভাগ শ্রমিক রয়েছে ইনফরমাল। ৮৫ ভাগ মানে হচ্ছে প্রায় ৬ কোটি শ্রমিক। তাদের কোনোই সুরক্ষা নেই। তাদের আইনের সুরক্ষা, মজুরির মানদণ্ড ও সামাজিক স্বীকৃতিও নেই। আমরা আইন নিয়ে যত আলোচনা করছি, তার মধ্যে রয়েছে মাত্র ৫ ভাগ। গৃহ শ্রমিক থেকে শুরু করে সচিবালয় শ্রমিকদের বিবেচনা করেন, তাহলে দেখবেন বৈষম্য কতোটা বেড়েছে। নির্মাণকাজে সরাসরি শ্রমিক দেখবেন না। যত শ্রমিক সব নিয়োগ দেয় ঠিকাদার, যাদের সরাসরি দেখতে পাবেন না। তাহলে তাদের অধিকার নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন? আমাদের সংস্কার করতে হবে, সে কারণে সবাইকে নিয়ে সুপারিশ তৈরি করতে চাই।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার লিমা বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে শ্রম শক্তির গুরুত্ব ও শ্রম শক্তির মর্যাদা সেটাকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের কাজকে সাধারণত ছোট কাজ মনে করেন। আমরা সমাজের মধ্যে আমাদের ঘরে বাইরে প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা দেখি শ্রমিকদের ‘তুই’ সম্বোধন করি। যেটা অপমানকর। আইন-আদালতের ভাষা বাংলা না হওয়ায় শ্রমিকদের তা বোধগম্য হয় না বলেও জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে হাত দিয়েছে। শ্রম সংস্কারে গঠিত কমিশনে সৈয়দ সুলতানের নেতৃত্বে রয়েছে ১০ জন। এই কমিশনের আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুপারিশ দেয়ার কথা রয়েছে।
সুপারিশ দেয়ার পরও শ্রম সংস্কার কমিশনকে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানান সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, যাতে তারা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নজরদারি রাখতে পারে। বাস্তবায়ন পর্যায়েও কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নেবে। কারণ কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো গ্রুপের চাপ রয়েছে। যারা কমিশনের রিপোর্ট এড়িয়ে যেতে চাইবে কিংবা কম গুরুত্ব দেবে।
অন্তর্বর্তী রিফর্ম সেল গঠনে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি আগামী এক বছর শ্রম কল্যাণ বছর হিসাবে ঘোষণা করে এবং সেই আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম সেভাবে বিন্যস্ত করে, তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সহজতর হবে। সেই আলোকে আমাদের সাজেশন থাকবে শ্রমিক সংক্রান্ত যতগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে, সেখানে অন্তর্বর্তী রিফর্ম সেল গঠন করা যায় কিনা? সেই রিফর্ম সেল কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মনিটরিং কাজগুলো করবে। রিফর্ম সেল গঠন করলে আমরা মনে করি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ইতিবাচক কাজ করবে। একইসঙ্গে আমরা মনে করি না যে, আমাদের উদ্যোক্তারা সব সুপারিশ বাস্তবায়নে এখনই প্রস্তুত রয়েছে। ফরমাল সেক্টরগুলোতে যারা রয়েছেন, তারা হয়তো প্রস্তুত থাকতে পারে কিন্তু ইনফরমাল সেক্টরে যারা আছেন তারা প্রস্তুত নয়।
সভায় শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, কমিশনের সদস্য এমসিসিআই’র সভাপতি কামরান টি রহমান, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার লিমা, বাংলাদেশে ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন বক্তব্য রাখেন। সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সভা পরিচালনা করেন।