ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

রেমিট্যান্স প্রবাহে ফের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার
mzamin

দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় বরাবরই শীর্ষ অবস্থানে ছিল সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষে উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো শীর্ষে উঠে এলো দেশটি। এর আগে ২০২২ সালের শেষে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ৩৯ কোটি ডলার। গত মাস পর্যন্ত শীর্ষে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৬ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগের মাস আগস্টে এসেছিল ২৯ কোটি এবং জুলাইয়ে ছিল ২৪ কোটি ডলার। 
যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর দেশটি এক ধাপে নীতি সুদহার ০.৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে সুদহার বেড়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনেক মার্কিন প্রবাসী সাহায্য পাঠিয়েছে। আবার সরকার পরিবর্তনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেশি পাঠাচ্ছেন। 

সাধারণত, প্রবাসী শ্রমিক বা রেমিট্যান্সের প্রসঙ্গ এলে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের নাম আসে না। সবার সামনে আসে সৌদি আরবের নাম। কারণ, বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রায় ৬০ শতাংশের গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বরাবরই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছিল। কিন্তু অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় এবার মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে চলে গেল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অনেকদিন ধরে শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ ছিল সৌদি আরব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষে উঠে আসে। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের হিসাবে শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। তিন মাসে আমিরাত থেকে এসেছে ১০৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৯২ কোটি ডলার। পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব থেকে ৮৬ কোটি ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ৬২ কোটি এবং যুক্তরাজ্য থেকে ৫৬ কোটি ডলার এসেছে। সব মিলিয়ে প্রথম তিন মাসে দেশে মোট ৬৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩৩.৩৩ শতাংশ বেশি। প্রথম তিন মাসের রেমিট্যান্সের মধ্যে ৪০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬২ শতাংশ এসেছে শীর্ষ পাঁচ দেশ থেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচারের প্রবণতা কমে আসায় এখন খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের ডলার দরে পার্থক্য কমেছে। ফলে ডলারের দর স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। এতে করে রেমিট্যান্স দ্রুত বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত বুধবার ১৯.৮৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। আগের মাস একই সময়ে যা কমে ১৯.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ যা ৪৮ বিলিয়নের উপরে ওঠে।
একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানা কারণ থাকতে পারে। তবে একটি কারণ হলো- যে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ রেমিট্যান্স কেনে সাধারণত ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে। ফলে ঢালাওভাবে বলা যাবে না, এর সবই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে।

জানা গেছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত, অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিক যান। তাদের অনেকের মধ্যেই ব্যাংকিং-ভীতি থাকে। এই দেশেগুলোয় যাওয়া শ্রমিকদের ছুটির দিনে সাধারণত ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ থাকে। শ্রমজীবী হওয়ায় চাইলেও কাজ ফেলে দেশে অর্থ পাঠানো তাদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। 
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা সবমিলিয়ে ১১ লাখের মতো। এরমধ্যে নিউ ইয়র্কেই থাকেন প্রায় চার লাখ। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা যে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন, তার প্রায় পুরোটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে বাংলাদেশ।
নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা আরিফ হোসাইন উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা দেশে টাকা পাঠান, তারা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন। কারণ তারা বেশির ভাগ দক্ষ। তাদের অনেকেই আবার বন্ডে বিনিয়োগ করেন।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status