দেশ বিদেশ
আন্দোলনের শহীদদের কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন শিক্ষার্থীরা
অনলাইন ডেস্ক
(৮ মাস আগে) ১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৯:৫১ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে নিহত শহীদদের কথা স্মৃতিচারণ করে কেঁদে ফেলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, এই সরকার ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি বিপ্লবী সরকার। বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। পরিপূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। হত্যাকাণ্ড, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। নিরপেক্ষতার কথা বলে পতিত স্বৈরাচারী শাসক ও তাদের সুবিধাভোগীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘মৃত্যুর মুখোমুখি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকরীদের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক মনির হায়দার। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোয় শিক্ষার্থীদের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের অভিজ্ঞতা, নির্যাতন, হামলা এবং পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার চাপের কথা তুলে ধরেন ওয়েবিনারে। কেউ কেউ স্মৃতিচারণার সময় সহযোদ্ধার শহীদ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কেউ বলেছেন আহত হওয়ার পর সেসব ভয়ংকর দিনের মানসিক যন্ত্রণার কথা।
ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, যে দেশে সাহসী তরুণসমাজ গুলির সামনে বুক পেতে দেয়, সঙ্গীর মৃত্যুতেও পালিয়ে যায় না, সে দেশে আর কোনো স্বৈরশাসন ফিরে আসতে পারে না।
ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, তিনি প্রথম থেকেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি আন্দোলন বেগবান হলে তিনি সমন্বয়কদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিছিল-সমাবেশের স্লোগানের দলে ছিলেন। আন্দোলনে অংশ না নিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। রাজশাহীর চারঘাটে পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তার গ্রামের বাড়ি গিয়ে কলেজশিক্ষক বাবাকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে, তিনি যেন ছেলেকে আন্দোলন করতে নিষেধ করেন। এমনকি চাকরি চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল আজিজ উত্তরা এলাকায় আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি ওই এলাকায় আন্দোলনের সময়ের অবস্থার কথা তুলে ধরেন। ১৭ জুলাই তার মাথার পেছনে গুলি লেগে খুলির একটি অংশে ভেঙে যায়। কানেও গুরুতর আঘাত পান। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিউরোসার্জন ছিলেন স্বাচিপের নেতা। তিনি তাঁকে চিকিৎসা দিতে সম্মত হননি। পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার চাপে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে গভীর রাতে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ওই দিন আজিজের এক সহযোগী গুলিতে শহীদ হন।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম আবর্তনের (ব্যাচ) ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মমতাজ সোমা বলেন, শহীদ আবু সাঈদ তাদের ব্যাচের আবর্তনেই শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সাঈদ যেদিন (১৬ জুলাই) শহীদ হন, সেই দিন ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ এবং তাদের ভাড়াটে অস্ত্রধারীদের তাণ্ডবের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বিবরণ তুলে ধরেন তিনি।
মমতাজ সোমা বলেন, ছাত্রীরা একপর্যায়ে সেদিন বিকেলে হলে ফিরে এলে হলের রেজিস্ট্রার অস্ত্রধারী তিন বহিরাগতকে হলে ঢুকিয়ে দেন। তারা ছাত্রীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর সেই রেজিস্ট্রারকে তার পদ থেকে অন্য বিভাগে স্থানান্তর করা হলেও তিনি বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এমনকি ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষকেরা এখনো আগের মতোই সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। তাহলে এত আত্মত্যাগ, এত রক্তদানে কী পাওয়া গেল।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী তৌফিক আহমদ অল্পের জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তার এক সহযোদ্ধার শরীরে ১৬৫টি ছররা গুলি লেগেছিল। কয়েকটি বের করা হয়েছে, এখনো শতাধিক গুলি তার শরীরে রয়েছে। আরেক শিক্ষার্থীর চোখে গুলি লেগেছে। তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। আহত ব্যক্তিরা এখনো সুস্থ হননি। অথচ এরই মধ্যে তাদের কথা ওপরের স্তরে যারা রয়েছেন, তারা ভুলতে বসেছেন। এটা বিপ্লবী সরকার। বহু মানুষের আন্দোলনে গঠিত হয়েছে। নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে বিপ্লবের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা চলবে না।
পাঠকের মতামত
নিরেপক্ষতার আড়ালে যদি পতিত স্বৈরশাসকের লোকজন পুনর্বাসিত হয় তবে বিচারহীনতা প্রতিষঠিত হবে। ন্যায় বিচার ইনসাফ সত্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।আগে প্রকৃত অপরাধীর বিচার করতে হবে।
এবার আন্দোলনে সকল হত্যার জন্য দায়ীদের সবার বিচারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন।