দেশ বিদেশ
৭৬ চাকরিপ্রত্যাশীর অপরাধটা কোথায়?
পিয়াস সরকার
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবারসরকারের বেঁধে দেয়া যোগ্যতা রয়েছে তাদের। নিয়ম মেনে করেছেন আবেদন কিন্তু তারপরও হচ্ছে না ৭৬ চাকরিপ্রত্যাশীর পদায়ন। অনেককে দেয়া হয়েছে ‘জামায়াত-শিবির’ ট্যাগ। সহকারী মৌলভী পদের এই চাকরিপ্রত্যাশীদের কোনো কারণ ছাড়াই দিনের পর দিন পদায়ন ঠেকিয়ে রেখেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
বঞ্চিত চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স পাস করে যোগ্যতা থাকার কারণেই আমরা সহকারী মৌলভী ও সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) উভয় পদের যোগ্যতা অর্জন করেছি। ২০১৮ সালে মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালাতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ আছে। পরবর্তী সংশোধনীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়’ কথাটি বাদ দেয়া হয়। উক্ত নীতিমালা বহাল থাকা সত্ত্বেও ২৩শে মার্চ ২০২১ সালে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাদের অনুরূপ সনদ দিয়ে অনেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছেন এবং তাদের এমপিও হয়েছে। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত পর্বে অনুরূপ সনদ দিয়ে আমাদের একাংশ চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে এবং তাদের এমপিও হয়েছে। এমনকি ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে অনুরূপ সনদ দিয়ে সকলকে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৮ (২৩শে নভেম্বর ২০২০) সালের নীতিমালা অনুযায়ী ফাজিল ডিগ্রিধারীদের সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা ৩য় বিভাগ থাকায় তারা চূড়ান্ত সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হন। পরবর্তীতে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
রুহুল কবির নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, আমরা ৭৬ জন একাধিকবার আবেদন করেও আমাদের এই সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। যার কারণে আমরা চরম বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি এবং এক বছরের অধিক সময় ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে হতাশায় দিনাতিপাত করছি। আজিজ মিয়া বলেন, আমি ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হই। সে সময় সমমান ও (ইসলামিক স্টাডিজ সাবজেক্টটি) স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রথম অবস্থায় বোধগম্য না থাকায় আমাদের চূড়ান্ত সুপারিশ থেকে বঞ্চিত করেন। অথচ মাদ্রাসা নীতিমালায় ২০১৮ (২৩শে নভেম্বর ২০২০ সংশোধিত) অনুসারে অনার্স, মাস্টার্সধারী সহকারী মৌলভীদের ২০২১ সালে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে সকলকে সুপারিশ করে এমপিওভুক্ত হয়। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ফাজিল সার্টিফিকেট দেখিয়ে অনেককে সুপারিশ করে। অথচ আমাদের নিবন্ধন সনদগুলো দাখিল, আলিম, অনার্স, মাস্টার্স দ্বারা আবেদন করা কিন্তু ফাজিল সার্টিফিকেট দেখিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে, যা নীতি বহির্ভূত। তিনি আরও বলেন, ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে তাদের ভুল ভাঙলে আমাদের সঙ্গে ভুক্তভোগী প্রায় ৫৫ জন (অনার্স, মাস্টার্স ইসলামিক স্টাডিজকে) চূড়ান্ত সুপারিশ করে এমপিও হয়। অথচ আমরা এক বছরে কয়েকবার আবেদন করেও কোনো সুরাহা হয় নি। একই নীতিমালায় ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ দেয়া হলো আর আমাদের ৭৬ জনকে বঞ্চিত করা হলো। যা আমাদের প্রতি চরম বৈষম্য।
শুধু তাই নয় একইভাবে জটিলতায় পড়ার পরও অন্তত ২৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে। পূর্বের সমস্যাগুলো সমাধানে তৎপর এনটিআরসিএ। এই পদে চাকরিপ্রত্যাশীরা সুফল পাবে বলে জানান তিনি।
এনটিআরসিএ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, সহকারী মৌলভীদের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আমরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছি। বিষয়টি নিয়ে ফের বসবো এরপর মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এরপর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে।