ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

কুলাউড়ায় চা বাগানে গাছ মার্কিংয়ে খাসিয়াদের বাধা

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার

কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই চা বাগানের পরিপক্ব গাছ মার্কিংয়ের জন্য বনবিভাগ ও চা বাগান উদ্যোগ গ্রহণ করলেও খাসিয়াদের অযাচিত বাধায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উল্টো খাসিয়ারা ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ বাগান কর্তৃপক্ষের।  
জানা যায়, কেদারপুর টি কোং লি: এর মালিকানাধীন কুলাউড়ার ঝিমাই চা বাগান সরকারের কাছ থেকে ৬৬১ একর পাহাড়ি জায়গা লিজ নিয়ে চা চাষ শুরু করে। বাগান কর্তৃপক্ষ ৪০/৪৫ বছর পূর্বে ফিল খাসিয়া নামক এক খাসিয়াকে বাগানের টিলাতে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়। ফিল খাসিয়া বাগানের জায়গায় পান চাষ শুরু করে তার আত্মীয়স্বজন এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও ৪৩টি খাসিয়া পরিবার এনে ঝিমাই চা বাগানের টিলায় বসবাস করছে এবং ধীরে ধীরে বাগানের ৩৭১ একর জায়গা খাসিয়াদের দখলে চলে যায়। বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ৬৬১ একর জায়গার খাজনা ও চা কর ইত্যাদি পরিশোধ করলেও মূলত চা চাষাবাদ হচ্ছে ২৯০ একর জায়গার মধ্যে। এর মধ্যে ২০১০ সালে বাগানের পরিপক্ব গাছগুলো কর্তনের জন্য অনুমতি পায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ।  কিন্তু বাগানের অভ্যন্তরে বসবাসরত খাসিয়াদের নানা আপত্তির ফলে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চ আদালতের রায়ে খাসিয়ারা হেরে গিয়েও থেমে যায়নি। তারা নতুন করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্তি করছে বলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন। বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর গত ২৯শে আগস্ট কুলাউড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদকে জরুরিভিত্তিতে ঝিমাই চা বাগানের কর্তনযোগ্য গাছের বাজারমূল্য নির্ধারণপূর্বক পৃথক পৃথক মার্কিং তালিকা ও প্রজাতিভিত্তিক বাজারমূল্য নির্ধারণের জন্য লিখিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন।  নির্দেশনা প্রদানের ১ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো মার্কিং শুরু করেনি বনবিভাগ। কিন্তু ঝিমাই পুঞ্জির অভ্যন্তরে বসবাসরত খাসিয়া নেতা রানা সুরং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে গিয়ে বাগানের বিরুদ্ধে বাগান না-কি জোরপূর্বক গাছ কেটে ফেলছে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছে। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার গাছ কাটা বন্ধ রাখার জন্য বাগান ম্যানেজারকে লিখিতভাবে বলেন। অথচ ঝিমাই চা বাগানে সরজমিন গিয়ে গাছ কাটার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যেখানে গাছের মার্কিং কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি বনবিভাগ; সেখানে গাছ কাটার বিষয়টি তো অনেক দূরের বিষয় বলে বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়। এলাকাবাসী জানান, খাসিয়ারা ঝিমাই চা বাগানের অভ্যন্তরে বসবাস করলেও তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। মাত্র ৪৪টি পরিবার ৩৭১ একর  বাগানের জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করে পাকা বাড়িঘর  তৈরি করে বসবাস করছে। এর বাইরেও বনবিভাগের আরও ৪ হাজার একর বনভূমি জবরদখল করে পান চাষ করছে রানা সুরং এর নেতৃত্বে ৪৪ খাসিয়া পরিবার। ঝিমাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান জানান, খাসিয়ারা ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছে। বাগানের অভ্যন্তরে পরিপক্ব গাছগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ গাছগুলো তাদের বাধায় মার্কিং করানো যাচ্ছে না। বাগান কর্র্তৃপক্ষ বর্তমানে খাসিয়াদের উস্কানি এবং হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে দিনানিপাত করছে বলে তিনি জানান। এব্যাপারে ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ গাছ মার্কিং করতে পারলে পরে গাছ কাটবে। এবং আমাদেরকে উচ্ছেদ করে ফেলবে। আমরা আশঙ্কায় আছি। কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ জানান, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বাগানের পরিপক্ব গাছ মার্কিংয়ের কথা বলছেন কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ মার্কিংয়ের এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা মার্কিংয়ের কাজ শুরু করলে আমাদের বনবিভাগের স্টাফ সঙ্গে থাকবে। কুলাউড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহিরুল হোসেন জানান, গাছ কাটার বিষয়ে খাসিয়ারা যে অভিযোগ করেছে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাগানে কোনো ধরনের গাছ কাটা হচ্ছে না। এরপরেও চা বাগানের বক্তব্য এবং খাসিয়াদের বক্তব্য আমরা শুনবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status