দেশ বিদেশ
বৃষ্টিতে ঢাকার সড়কে ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার
ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঝিরিঝিরি আবার কখনো মুষলধারে। কয়েক ঘণ্টার ঝুম বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ঢাকার সড়ক। অলি-গলি থেকে মহাসড়কও ডুবে যায় বৃষ্টির পানিতে। সড়কের খানাখন্দের কারণেও পানি জমে বিভিন্ন জায়গায়। বৃষ্টিতে পরিবহন সংকট ও জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। বৃষ্টি বাড়লে বাড়ে ভোগান্তির মাত্রাও।
গতকাল দুপুরের মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ঢাকার অনেক সড়ক। রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, মতিঝিল, টিকাটুলি, বংশাল, পুরান ঢাকা, সেগুনবাগিচা, পান্থপথ, তেঁজকুনিপাড়া, তেঁজতুরি বাজার, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুরসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজটেরও। বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেল চালকরা। খানাখন্দে কোথাও কোথাও রিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা সিএনজি’র স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। জাফর মিয়া নামের এক রিকশাচালক জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। জলাবদ্ধতার কারণে ভাঙা রাস্তা দেখা না যাওয়ায় দুর্ঘটনায় পড়ে রিকশা। গতকাল বৃষ্টির কারণে সড়কে যানজটও কম দেখা গিয়েছে দুপুর পর্যন্ত। তবে যেসব যানবাহন চলেছে তাও জলাবদ্ধতার কারণে ধীরগতিতে চলেছে। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা আর যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা। বৃষ্টির মধ্যে অফিস যেতে সড়কে বের হলেও কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। যাত্রী ছাউনি থাকলেও তার অধিকাংশই নানাভাবে নষ্ট হয়েছে। তাই অনেক অফিসগামী মানুষকে ফ্লাইওভার, মেট্রারেল কিংবা ফুটওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী খোকন খান জানিয়েছেন, অফিস খোলা থাকায় বৃষ্টির মধ্যেও বের হতে হয়েছে তাকে। মালিবাগে হাঁটুসম পানি থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে সড়কে। তিনি বলেন, আধাঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় সড়কে। এই পানি নামতে অনেক সময় লাগে। মোটরসাইকেল চালক মেহেদী হাসান বলেন, বৃষ্টির মাত্রা বেশি থাকায় রেইনকোট পরেও কাজ হয় না। আর রাস্তা পানিতে ডুুবে যাওয়ায় মোটরসাইকেলের অর্ধেক তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসে যেতেও দেরি হয়। রাস্তায় পানি না জমলে ভোগান্তি কম হতো। রাইদা পরিবহনের একটি বাসের সহকারী বলেন, যেই বৃষ্টি তাতে মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। আমাদের গাড়ির অর্ধেক ফাঁকা। রাস্তায় গাড়িও কম। তাও পানির কারণে যানজটে পড়তে হচ্ছে। রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগরের রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি জমেছে। এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ফুটপাথে ও দোকানে। ওই রাস্তায় আসা এক পথচারী বলেন, পুরো রাস্তায় হাঁটু পানি জমেছে। ? এর মধ্যে যখন যানবাহন চলাচল করছে সেই ঢেউ এসে আমাদের গায়ে আছড়ে পড়ছে। অনেক দোকানে পানি ঢুকে গেছে। রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, ধোলাইপাড়, জুরাইন এলাকার মুরাদপুর, পোকার বাজারসহ কিছু কিছু রাস্তা সারা বছরেই পানিতে ডুবে থাকলেও গত দুইদিনের বৃষ্টিতে রাস্তার পানি উপচে দোকানপাট ও বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, ড্রেনগুলো ময়লায় ভরে গেছে। সিটি করপোরেশন ও এলাকার কাউন্সিলরসহ লোকজনের গাফলতির কারণে পানিতেই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। ভারী বৃষ্টিপাতে তাদের ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে।
ঢাকায় সব সময় অল্প ঝুম বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়। নগর সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকার প্রাকৃতিক ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কৃত্তিম যে ড্রেনেজগুলো বানানো হয়েছে তা এই সংখ্যক পপুলেশনের ভার বহন করার মতো অবস্থায় নেই। তাই আইডিয়াল বৃষ্টিপাতেই নগরের ড্রেনেজ চ্যানেলের ওপর ৫০ ভাগ চাপ পড়ে। বৃষ্টিপাতের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পানির চাপ সরাসরি যে ড্রেনেজ দিয়ে যায় তা এই পরিমাণ পানি ধারণ করার জন্য সক্ষম না।