ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ইলেক্টোরাল ভোট

আমেরিকান গণতন্ত্রের সৌন্দর্য

হেলাল উদদীন রানা

(১ সপ্তাহ আগে) ২ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:১৭ অপরাহ্ন

mzamin

বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রমী নির্বাচনী ব্যবস্থা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। পৃথিবীতে এই ইলেক্টোরাল ভোট পদ্ধতি আর কোথাও নেই। এই ব্যবস্থার পক্ষে বিপক্ষে নানা মত থাকলেও ইলেক্টোরাল ভোট ব্যবস্থা আমেরিকার গণতন্ত্রকে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখে চলেছে বলে মনে করা হয়। ইলেক্টোরাল ভোট পদ্ধতিকে তাই আমেরিকান গণতন্ত্রের বিউটিও বলা হয়। তবে এই ইলেক্টোরাল ভোট পদ্ধতি আমেরিকান সাধারণ মানুষসহ অনেকের কাছেই পরিস্কার নয়। কেউ কেউ ইলেক্টোরাল ভোটকে জটিল একটি পদ্ধতি এমন ধারণা করে থাকেন।

১৭১৭ সালে পেনসেলভেনিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত এক কনস্টিটিউশন কনফারেন্সে ইলেক্টোরাল সিস্টেমের দুরদর্শী এই ধারণাকে আইনে রূপান্তর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সংযুক্ত করা হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, সকলের সম-অধিকার নিশ্চিত ও বড় রাজ্যগুলোর আধিপত্য ঠেকাতে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।

যার ফলে আমেরিকা আরকানসা, ইলিনয় আর ডেলাওয়ারের মত অপেক্ষাকৃত ছোট রাজ্যগুলো থেকে বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন এর মত প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। তা নাহলে ক্যালির্ফনিয়া, নিউইয়র্কের মত জনবহুল রাজ্যের মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্সি ঘুরপাক খেত।ইলেক্টোরাল ভোট আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে এটির উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ১২তম সংশোধনী হিসাবে তা গৃহীত হয়। এটি একটি পরোক্ষ ভোটের প্রক্রিয়া। ইলেক্টোরাল ভোট পদ্ধতি বুঝতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাকে বুঝতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে দুইকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা বিদ্যমান। উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের ছোট বড় প্রত্যেকটি রাজ্যে সমানভাবে দুটি করে সিনেটে প্রতিনিধি আসন আছে। সে অনুযায়ী সিনেটের মোট আসন সংখ্যা একশ। অর্ধশত রাজ্যে রয়েছে মোট ৪শ ৩৫টি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা কংগ্রেসের আসন, তাও আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত। ৫০টি রাজ্যের বাইরে আছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি বা ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া। রাজধানী ওয়াশিংটনে আছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৩টি আসন। ৫০টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি মিলিয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের এই ৪শ ৩৮ জন এবং ১শ সিনেটর হচ্ছেন আমেরিকার আইন প্রণেতা। এই মোট ৫শ ৩৮ কংগ্রেশনাল আসন হচ্ছে ইলেক্টোরাল ভোট।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রত্যেকটি রাজ্যে জিতে আসতে হয়।

নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের আসন সংখ্যা রাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে নির্ধারণ হয়ে থাকে। এটি রাজ্য ভেদে বাড়ে কমে প্রতি দশ বছর পর পর ইউএস সেনসাসের ভিত্তিতে। সিনেটে নির্বাচিতদের সিনেটর এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের কংগ্রেসম্যান বা কংগ্রেস উইমেনস বলা হয়। উভয় কক্ষে সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রাজ্যে জনগণের ভোটে জয়লাভ করলে তবেই তিনি সেই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের অধিকারী হন।

উদাহরণস্বরূপ সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট একক রাজ্য হিসাবে ক্যালির্ফনিয়ার ৫৪টি। যিনি ক্যালির্ফনিয়ায় জয়লাভ করবেন তিনি এই ৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন। আবার সবচেয়ে কম ইলেক্টোরাল ভোট ৩টি করে রয়েছে ৫টি রাজ্যের এবং ওয়াশিংটন ডিসির। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে সর্বনিম্ন ২শ ৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট প্রয়োজন হয়।

মূলত বৃহত দুইদল ডেমোক্রাট ও রিপাবলিকান ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনেই কোনো প্রকার মার্কা বা প্রতীক ব্যবহার করা হয়না বা প্রচলন নেই। ব্যালটে কেবল প্রার্থীর নাম এবং কোন দল থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন সেটা উল্লেখ থাকে। তারপরও ডেমোক্রাটদের প্রতীক হচ্ছে গাধা এবং রিপাবলিকানদের প্রতীক হাতি।  যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্য লাল বা নীলে বিভক্ত হলেও প্রতি ৪ বছর অন্তর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিছু কিছু রাজ্য কালার বদলাতে শুরু করে। অর্থাৎ দল বদলানো এই রাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এসবের বেশির ভাগ রাজ্য যে দিকে ঝুঁকে পড়ে প্রেসিডেন্সি সে দিকেই যায়। এবার এরকম ৭টি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পেনসেলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা ও অ্যারিজোনা। এই সাতটি রাজ্যের রয়েছে মোট ৯৩ ইলেক্টোরাল ভোট।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন ইলেক্টোরাল ভোটের যে প্রজেকশান করেছে এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস ২শ ২৬ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ২শ ১৯ ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন এমনটা প্রায় নিশ্চিত। তবে ২শ ৭০ ইলেক্টোরাল ভোট জোগাড় করতে হলে
এই সাতটি রাজ্যের বেশির ভাগের জনরায় লাগবে। আর উভয় প্রার্থী ও তাদের ক্যাম্পেইনের দৃষ্টি এখন সে দিকেই নিবদ্ধ।

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশে কাস্টিং ভোটের সংখ্যানুপাতে রাজনৈতিক দল গুলোকে আসন বন্টন করতে হবে তাহলে সর্বোচ্চ সংখ্যক নাগরিকদের প্রতিনিধি সংসদে থাকবে। ধরুন ১২ কোটি ভোট কাস্টিং হয়েছে ৩৫০ দিয়ে ১২ কোটিকে ভাগ দিয়ে ৩৪২৮৫৭ ভোট পেলে একটি আসন পাবেন। ফ্যাকশন ভোটের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি ভোট থাকবে তিনি বা সেই দল শেষ আসনটি পাবেন। প্রসিডেন্ট সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। দল ও ব্যক্তি হতে ও হতে পারেন।

Sk Abdul Malek
২ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ৩:০৭ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status