দেশ বিদেশ
পাকিস্তান নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ভালো, অন্যথায় একাত্তর মনে রেখে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখবে বাংলাদেশ
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২ অক্টোবর ২০২৪, বুধবারএকাত্তরে পাকিস্তান বাংলাদেশে যেসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তা মনে রেখেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় একাত্তরের ঘটনাগুলো স্মরণ করা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, তারা নিজে থেকে এসব ঘটনার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ভালো। অন্যথায় কূটনৈতিক সম্পর্ক তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এটা আটকাবে না বা সংকুচিত হবে না। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের নেতৃত্ব বিভিন্ন সময়ে একাত্তরের ঘটনাগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার দায় স্বীকার করে উদারভাবে ক্ষমা চায়নি, যা তারা করতে পারতো। এ কারণে হয়তো বাংলাদেশের দিক থেকে সম্পর্কটা সংকুচিত করা হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থকে ক্ষণ্ন্ন করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়া বর্তমান সরকার আগের সরকারের মতো সংকোচন নীতি গ্রহণ করবে না। বরং একাত্তরকে মনে রেখেই সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নেবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সমসমায়িক বিষয় নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়েও মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বিমসটেক সম্মেলনে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে ড. ইউনূসের
এদিকে চলতি বছরের নভেম্বরে সাত দেশের আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বলেন, নিউ ইয়র্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সর্বাচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যেদিন নিউ ইয়র্কে পৌঁছেছেন তার আগেরদিন চলে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কমনওয়েলথে হবে না (২১-২৬ অক্টোবর দ্বীপ রাষ্ট্র সামোয়ার রাজধানীর আপিয়ায় কমনওয়েলথ সম্মেলন)। কারণ, ওখানে যাবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। উনি যাবেন ব্রিকসে। কারণ, বিক্স তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও যাবেন না (কমনওয়েলথ সম্মেলনে)।
তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা সম্ভাবনা আছে আগামী মাসে। বিসমটেকের সম্মেলনে হবে। প্রত্যাশিত, এখন তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাবনা আছে নভেম্বর হবে, সেখানে হয়তো দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ হবে। এছাড়া, আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে পারস্পরিক যে উদ্বেগ আছে সমাধানের চেষ্টা করবো।
হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা হয়নি
এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সমপ্রতি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আমরা আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। আমরা উভয়পক্ষ একমত হয়েছি যে, আমাদের পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন নিজেদের স্বার্থে। এটাতে বাংলাদেশের স্বার্থ আছে, ভারতেরও স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা এই লাইনে কথাবার্তা বলেছি। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে পারস্পরিক যে উদ্বেগ আছে সমাধানের চেষ্টা করবো। এ রকম কথা হয়েছে।
ভিসা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা একটু ভিসা নিয়ে কথা বলেছেন। এখন মেডিকেল ভিসা চালু আছে। ভিসা দেয়ায় অনেকে ভারতে চলে গেছেন। তারা আশা করছেন, কিছুদিনের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। তারা সব ভিসা চালু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। হয়তো বেশিদিন লাগবে না। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। আমরা বলেছি যে, প্রথম অবস্থায় সরকার ছিল না কিছুদিন। পুলিশ ছিল না অনেক দিন। এগুলোর কারণে নিরাপত্তায় কিছু সমস্যা হয়েছে, এটা আমরা স্বীকার করি। এখন পুলিশ অনেকাংশে ফিরে এসেছে। সেনাবাহিনী এখনও আছে। নিরাপত্তা এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে ইদানীং বিদেশি কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।
প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্ক স্থানীয় সময় গত ২৩শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করেন তৌ?হিদ-জয়শঙ্কর।
মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে যা বললেন-
ওদিকে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আগামী শুক্রবার (৪ঠা অক্টোবর) ঢাকা আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে থাকা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ৪ঠা অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সফরে আমাদের এখানে আসবেন। এটা কিন্তু অফিসিয়াল সফর হিসেবে তিনি আসছেন। সফরে সব উপাদান থাকবে। আমরা হয়তো আরও বড় সফরের আয়োজন করতে পারতাম। কিন্তু উনি বললেন, না আমি এখনই আসবো। এসে ওনার সঙ্গে দেখা করে যাবো এবং এটাকে আমরা একটা অফিসিয়াল সফর হিসেবে করতে চাই। কাজেই এই সফরে সব উপাদান থাকবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো থেকে দ্বিক্ষীয় বৈঠক, ওয়ান টু ওয়ান মিটিং এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত; সবকিছু এটাতে হবে। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্মুথলি আয়োজন করেছি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। উনি আসছেন ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন উপ-মন্ত্রী, ধর্ম উপমন্ত্রী, দু’জন সংসদ সদস্য থাকবেন প্রতিনিধিদলে।
ড. ইউনূসের সঙ্গে আনোয়ার ইব্রাহিমের বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম যিনি ফোন করেছিলেন তিনি আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসের খুব কাছের মানুষ। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের বহুপক্ষীয় সম্পর্ক আছে। সবকিছু নিয়ে আলাপ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয় আছে, বিনিয়োগের বিষয় আছে। আমাদের শ্রম ইস্যু আছে।
তিনি বলেন, কিছু সমস্যাও আছে। আমরা চেষ্টা করবো সেগুলো যতটা দূর করা যায়। যেহেতু দুইজন সরকারপ্রধানের মধ্যে ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান আমরা আশা করি আমাদের মধ্যে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর অনেকখানি সমাধান করতে পারবো। আমি বলছি না, একদিনের সফরে সবকিছু সমাধান করতে পারবো। অন্তত তারা পথ দেখাতে পারবেন। যাতে আমরা কাজ করতে পারি।
২০২৫ সালে আসিয়ানের চেয়ার হতে যাচ্ছে মালযেশিয়া। এই সুবাদে রোহিঙ্গা সমস্যাসহ আসিয়ানের সদস্য পদ পেতে বাংলাদেশের সুবিধা দেখছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আসিয়ানের চেয়ার হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া, ২০২৫ সালে। রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে আসিয়ানে আমরা প্রত্যাশা করবো মালয়েশিয়া আরেকটু শক্ত ভূমিকা নেবে। আসিয়ানের পক্ষ থেকে যাতে করে এই সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়। এ ছাড়া, আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে চাই। আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া চেয়ারম্যানশিপের মধ্যে এটা হয়ে যাবে।
ছয় সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের পরে নির্বাচনের রোডম্যাপ
এদিকে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ছয় সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের পরে দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তাদের তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে- তারা ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে তাদের সুপারিশগুলো দেবে। আরও কিছু স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। তখনই কিন্তু রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে। তার আগে রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে না।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা জানতে চেয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবার সঙ্গে আমরা বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছি যে, তাদের বেশি কিছু বলার ছিল না। আমরা তাদের প্রেক্ষাপট বলেছি। এ সরকার আসতে চায়নি এবং নিজে থেকে আসেনি।
তিনি বলেন, যুব সমপ্রদায় কিছু জিনিস চায় এবং তারা এমন একটি ব্যবস্থা চায়, যেখানে স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা সংস্কার চায়। আমাদের এজেন্ডার সঙ্গে তাদের চাওয়া মেলে। আমরা গোটা বিষয়টি তাদের খুলে বলেছি এবং জানিয়েছি এরপরে নির্বাচন দিয়ে আমরা এখান থেকে সরে যাবো।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বাংলাদেশি গ্রুপের কথা হয়েছে এবং সবাই জোর দিয়েছে যে, আমরা যেন তাড়াহুড়ো না করি।
১৯৭১ সালে মুক্তিকামী মানুষের উপর গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাইতে হবে। এটা এদেশের গণমানুষের দাবি।
১৯৭১ সালে মুক্তিকামী মানুষের উপর গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাইতে হবে। এটা গণ মানুষের দাবী।
হাসাও মাহমুদের কথাই তো বলে গেলো
যদি তাই হয় তাহলে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের স্বাধীনতার পরে ইন্ডিয়ার সাথেও সম্পক তেমনটাই রাখা উচিৎ।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সফরকালে তিনি ১৯৭১ এর ঘটনাবলির ব্যাপারে ক্ষমা চেয়ে অতীতকে ভুলে নতুন ভাবে সম্পর্কের আহ্বান জানান। তারপরে ও তথকথিত সেকুলারদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি রহস্যজনক।
Hope for the best
হাসাও মাহমুদের মুখ ভেংচানো কথার মতো কোনো কিছুই তো পেলাম না। উনিতো সুন্দর বলেছেন।
তারা নিজে থেকে এসব ঘটনার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ভালো।---নতুবা তাদের এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না! হায়রে কি নতজানু কথাবার্তা! ঐ সময়ের হাজার হাজার কোটি টাকার যৌথ সম্পদের ন্যায্য অংশ পাওয়ার ব্যাপারে তো কিছুই বললেন না।
এখনও আওয়ামী বয়ানেই আছে এরা। চেতনা আর আবেগ দিয়ে কূটনীতি চলে না।
মনে হচ্ছে যেন হাসান মাহমুদ কথা বলছে!