ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

গুলিতে নিহত জামালের স্ত্রী চার সন্তান নিয়ে অসহায়

শুভ্র দেব
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবারmzamin

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পিয়ন পদে চাকরি করতেন কামাল মিয়া (৩৯)। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রিকশা চালিয়ে উপার্জন করে ছয় সদস্যের পরিবারের যাবতীয় খরচ যোগাতেন। ১৯শে জুলাই শুক্রবার মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা একমাত্র ছেলেকে খাবার ও জামাকাপড় দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কামাল। এরপর থেকে তার সুখের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে চার সন্তান ও স্ত্রী এখন দুমুঠো ভাত, বাড়ি ভাড়া ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। স্বামীর কর্মস্থল বিআইডব্লিউটিএ’তে গিয়ে চাকরির জন্য ধরনা দিচ্ছেন তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। এতে করে চার সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন কামালের স্ত্রী। চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানই লেখাপড়া করেন। টাকার অভাবে তাদের লেখাপড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে। 

কামালের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন গতকাল মানবজমিনকে বলেন, ১৫৩/১১ শান্তিনগর বটতলার ছোট একটি বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে আমাদের বসবাস ছিল। এখনো সেখানেই আছি। স্বামীর রোজগারেই আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার চলতো। আমি সামান্য আয় করতাম। এখন সেটিও নাই। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর আমার কাজ চলে যায়। চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই মেয়ে। ছেলেটা সবার ছোট। বড় মেয়ে আনিকার বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকেও সাহায্য সহযোগিতা করতে হয়। দ্বিতীয় মেয়ে সুরভী আক্তার রামপুরা এলাকার একটি মাদ্রাসায় একাদশে পড়ে। তৃতীয় মেয়ে সুরাইয়া সেগুন বাগিচা বেগম রহিমা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি এবং ছেলে ইয়াছিন মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার শেখ জনরুদ্দিন দারুল উলুম মাদ্রাসায় নাজেরা বিভাগে লেখাপড়া করছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি ছিল গত ১৯শে জুলাইয়ের। কয়েকদিন ধরে টানা আন্দোলন ছিল ঢাকায়। বিভিন্ন স্থান থেকে শুধু গুলিতে নিহত হওয়ার খবর আসছিল। তাই ওইদিন আমার স্বামী সারাদিন বাসাতেই ছিলেন। মাগরিবের নামাজের পর ছেলে ইয়াছিনের জন্য কিছু খাবার ও কাপড় নিয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বটতলার বাসা থেকে বের হওয়ার কিছু সময়ের ভেতরে একটি ছোট্ট ছেলে এসে আমাদের জানায় আমার স্বামী কামাল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ খবর শুনে আমি ও আমার মেয়ে সুরাইয়া দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি কিছু লোকজন আমার স্বামীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমার মেয়ে সিএনজির পেছন পেছন দৌড়ে চিৎকার করে বলছিল ওনি আমার বাবা, তার মেয়ে আমি। আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু তারা সে কথা না শুনেই সিএনজি নিয়ে চলে যায়। তিনি বলেন, যখন আমার মেয়ে সিএনজি’র পেছন পেছন দৌড়াচ্ছিল তখন পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যদিও সেই গুলি আমার মেয়ের শরীরে লাগেনি। একটি ছেলে তার হাত ধরে টান না দিলে হয়তো আমার মেয়েও পুলিশের গুলিতে মারা যেতো। এ সময় ঘটনাস্থলে আমার আরেক মেয়েও সেখানে আসে। তাকেও পুলিশ গুলি করতে চায়। তখন আশেপাশের সাধারণ মানুষ ও আমরা চিৎকার করে বলি আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের ওপর গুলি করবেন না। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা খাতুন বলেন, পরে আমি ও আমার মেয়ে রিকশা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে গিয়ে আমার স্বামীকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে খোঁজার পর মর্গে গিয়ে স্বামীকে খুঁজে পাই। দেখতে পাই মর্গে আমার স্বামীর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পড়ে আছে। ততক্ষণে চিকিৎসকরা আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে অজ্ঞাত হিসাবে মর্গে মরদেহ রেখে দিয়েছেন। তার শরীরে হাত দিয়ে দেখতে পাই গুলি তার পিঠে লেগে পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ স্থান থেকে রক্ত ঝরছে। ওইদিন স্বামীর মরদেহ দেখার জন্য মর্গের দায়িত্বে থাকা লোকদের পাঁচশ’ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। ফাতেমা বলেন, তখন কি করবো না করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। হাসপাতালের বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিতে যাই। তখন আমাদের বলা হয়। ঘটনাস্থল পল্টন থানাধীন। তাই আমাদেরকে পল্টন থানায় যোগাযোগ করতে হবে। এই কথা শুনে আমরা পল্টন থানায় যাই। কিন্তু থানায় গিয়ে দেখি গেট বন্ধ। ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। উপায়ন্তর না পেয়ে রাতে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসি। সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি। তবে ওই রাতে আমাদের মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। পরের দিন রাতে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়। লাশ বুঝে পেয়ে তার দাফন করি। 

ফাতেমা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর এখন আমরা পুরোপুরি অসহায়। হঠাৎ করে এমন মুহূর্ত আসবে কখনো ভাবিনি। ব্যাংকে আমাদের জমানো কোনো টাকা নাই। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। তাদের লেখাপড়ার পেছনে বড় ধরনের খরচ আছে। বাসা ভাড়া দিতে হয়। চলতি মাসে ভাড়া দিতে পারিনি। খাবারের বন্দোবস্ত করবো নাকি বাসা ভাড়া দিবো। এখন পর্যন্ত কেউ ওভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেনি। আদৌ সহযোগিতা পাবো কিনা জানি না। নির্দোষ স্বামী আমার। কেনই বা তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো? এখন চার সন্তান নিয়ে আমি কি করবো, কোথায় যাবো? কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। প্রায় দুই মাসের মতো হয়ে গেল। নিজের বা সন্তানের জন্য কোনো চাকরিও জোগাড় করতে পারিনি। ভাবলাম বিআইডব্লিউটিএ’তে যোগাযোগ করলে একটা চাকরি পাওয়া যাবে। দু’দিন মতিঝিলের অফিসে গিয়ে কথা বলেছি। এখন আমাকে বলা হয়েছে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করার জন্য। এ ছাড়া বলা হয়েছে কোনো সমন্বয়ক যদি সুপারিশ করে তাহলে চাকরি হতে পারে। 
 

পাঠকের মতামত

How do I connect with this family?

Monjuree
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

please provide contact information of this family. Thank you.

Rana
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। ওনাকেও শহীদের মর্যাদা দিতে হবে

রহমান
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

Pls, provide the contact no of his wife.

Rupa
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

এই শহীদ পরিবারদের জন্য কিছু করতে না পারলে এই বিপ্লব এর মুল্য থাকবে না । রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিৎ

NASIR
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

The family should get Tk. 1.00 crore compensation money.

Mohammad Monir Hossa
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

The report should include address\ phone number so that willing person may extend help to them.

Shoaib
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

এই অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা করতে সরকার ও স্বচ্ছল সকলের হাত বাড়ানোর অনুরোধ করছি। বিআইডব্লিউটিএর অপরিহার্য দায়িত্ব এই পরিবারকে একটা চাকরি দেওয়া।

Kazi Ashrafur Rahman
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

Pls provide account no. OR Bikash no to help them

Mehedi Hasan
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৭:৩০ পূর্বাহ্ন

এক কোটি টাকা দেওয়া হউক।

আইয়ুব
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৭:২২ পূর্বাহ্ন

ওইদিন স্বামীর মরদেহ দেখার জন্য মর্গের দায়িত্বে থাকা লোকদের পাঁচশ’ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল।

রহমত ভুঁইয়া
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status