বিশ্বজমিন
আউটলুক ইন্ডিয়াকে শাফকাত মুনির
ভারত পাল্টেছে এই বার্তা দিতে ঢাকায় দূত পাঠানো উচিত নয়া দিল্লির
মানবজমিন ডেস্ক
(৯ মাস আগে) ২৩ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:০২ অপরাহ্ন

ভারতের সঙ্গে একটি পরিপক্ব, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। তাদের অনেকে মনে করেন, এতদিন এই সম্পর্ক ছিল একদল, এক ব্যক্তি ও এক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। তা বিস্তৃত সম্পর্ক ছিল না। তাই নয়া দিল্লির একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়া জরুরি যে, যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন যা-ই হোক না কেন বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। এ সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। আউটলুক ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ঢাকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো শাফকাত মুনির। এতে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারত কীভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামত করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। এখানে প্রশ্নোত্তর আকারে সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: শহরগুলোর রাস্তায় আইন শৃংখলা কি ফিরেছে? পুলিশ সদস্যরা কি দায়িত্বে ফিরেছেন অথবা তাদেরকে কি এখনও টার্গেট করা হচ্ছে?
উত্তর: আস্তে আস্তে শৃংখলা ফিরছে। আইন শৃংখলা ও স্থিতিশীলতা দ্রুত পুনঃস্থাপনে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন পর্যন্ত ৫৩৯টি থানায় ফিরেছেন পুলিশ সদস্যরা। এখানে সবেমাত্র একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রকৃতিগতভাবে সব সময়ই বিপ্লব হয় বিশৃংখল। আমি আস্থাশীল যে, কয়েক দিনের মধ্যে সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, পুলিশের ওপর আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষয়ে গেছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, উল্লেখযোগ্য সংস্কার করা হবে পুলিশে। তাদের নির্ধারিত পোশাক ও লোগো পরিবর্তন করা হবে। নাগরিক এবং নাগরিক সমাজের সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি বড় রকমের সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পুলিশ। পুলিশে আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। আমাদেরকে এমন পদ্ধতিতে সংস্কার করতে হবে যে, পুলিশি সংস্কৃতি পরিবর্তন হয় এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের দৃশ্য আমাদেরকে রাজপথে যেন আর কখনো দেখতে না হয়।
প্রশ্ন: শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে ভারত। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আছে। কীভাবে নয়া দিল্লি আস্থা পুনর্গঠন করতে পারে? নয়া দিল্লির সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্পর্ক কি শেখ হাসিনা আরো কঠিন করে তুলেছেন ভারতে অবস্থান করে?
উত্তর: বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ভারতের সঙ্গে একটি পরিপক্ব, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে কথা বলেছেন এবং তাদের মধ্যে চমৎকার মতবিনিময় হয়েছে। এটা জেনে আমি আনন্দিত। আমি পুনর্বার বলতে চাই যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন একটি বার্তা দিতে ঢাকায় একজন বিশেষ দূত পাঠানো উচিত, যাতে বোঝা যায় যে তারা পাল্টাতে চায়। এমন একটি সফর ভবিষ্যত গঠনমূলক সম্পর্কের পথ তৈরি করতে পারে। আমাদেরকে এটা স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশে জনগণের বিপ্লব ঘটে গেছে এবং হাসিনা এখন একটি ইতিহাস! ভারতে হাসিনার অব্যাহত অবস্থানের বিষয়ে এরই মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, হাসিনার বিরুদ্ধে জনগণের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ছাত্র ও বিভিন্ন গ্রুপের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। গত কয়েক দিনে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। হাসিনার অব্যাহতভাবে ভারতে অবস্থান করে সেখান দেয়া তার বক্তব্য/বিবৃতি বিপ্লব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হেয় করছে। এতে অবশ্যই সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলবে, যা আমরা চাই না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা পাবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় তিনি কি তা দেয়ার মতো অবস্থায় থাকবেন?
উত্তর: সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এমনকি একটি মৃত্যু অথবা সহায় সম্পত্তি ধ্বংসের একটি ঘটনাও অনেক বেশি। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা জানতে পেরেছি যে, প্রচুর ভুয়া তথ্য আছে। তাই এসবের হোতাদেরকে ন্যায়বিচারের আওতায় আনাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে ড. ইউনূস পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিপ্লব সব বাংলাদেশির ‘মনসুন রেভ্যুলুশন’। ছাত্র এবং এ দেশের নাগরিকরা এই ধর্মনিরপেক্ষ বিপ্লব এনেছেন। এটা এমন এক বিপ্লব যেখানে সব নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সমান অধিকার থাকবে। নতুন বাংলাদেশে একগুঁয়েমি, বৈষম্য ও অবিচারের কোনো স্থান নেই। এই বিপ্লবের শহীদদের কাছে ঋণী আমরা।
প্রশ্ন: ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয়ার অন্যতম কারণ হলো ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের মাটি কখনো কখনো ব্যবহার করতো ভারতবিরোধী শক্তি। নতুন প্রশাসন অথবা পরে নির্বাচিত যেকোনো সরকার নয়া দিল্লির নিরাপত্তা সংশয়ের প্রতি কি সংবেদনশীলতা দেখাবে?
উত্তর: অন্তর্বর্তী সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত যেকোনো সরকার কখনোই চাইবে না যে, ভারত সহ যেকোনো দেশের যেকোনো বিদ্রোহী গ্রুপ বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করুক। আমি আগেই যেমনটা বলেছি আমরা ফলপ্রসূ, গঠনমূলক এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক চাই। একে অন্যের নিরাপত্তা উদ্বেগের ক্ষেত্রে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে সংবেদনশীল।
প্রশ্ন: ভারতের আরেকটি উদ্বেগ হলো চীনকে নিয়ে। হাসিনার শাসনকালে চীন এবং ভারত- উভয়েই সারাদেশে (বাংলাদেশ) তাদের উপস্থিতি বিস্তার করেছে। এখন ভারত আউট, এ অবস্থায় চীন কি আধিপত্য বিস্তার করবে?
উত্তর: বাংলাদেশে কোনো দেশ আধিপত্য বিস্তার করবে এমন কোনো প্রশ্নই হতে পারে না। এরই মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম সত্তা। তাই আধিপত্যের প্রশ্নই উঠতে পারে না।
প্রশ্ন: শেখ হাসিনা বার বার অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের অস্থিরতা উস্কে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কারণ বাংলাদেশে একটি ঘাঁটি স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেননি তিনি। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর: এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। ‘মনসুন রেভ্যুলুশন’, ছাত্র ও নাগরিকদের আত্মত্যাগকে হেয় করার এটি একটি বেপরোয়া প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে এই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল যে জন্য, তাকে অস্বীকার করার এটা একটি চেষ্টা। এটা বাংলাদেশিদের, বাংলাদেশিদের জন্য এবং বাংলাদেশীদের দ্বারা সংঘটিত একটি বিপ্লব। এক্ষেত্রে বিদেশি হাত থাকার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। সময় এসেছে এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বে জড়ানো থেকে বিরত থেকে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার।
পাঠকের মতামত
ভারতের বর্তমান অবস্থানই কি নিশ্চিত করে না যে তারা বাংলাদেশের বন্ধু একথাটা ভুল,বরং তারা একটি নির্দিষ্ট দলেরই বন্ধু। যদিও গতকাল পত্রিকায় দেখলাম ছাত্রলীগের একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে নিহত হয়েছে। তাই আমার তাদের বন্ধুত্ব নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকা কি উচিত নয়?
আমি মনে করি আমার দেশ (বাংলাদেশ ) ভারতে কঠিন ভাষায় জবাব দেওয়া . শেখ হাসিনা দিয়ে আমার দেশ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছে ভারত . আমারদের দেশ থেকে অনেক লোক ভারতে বেড়াতে যায় এবং অনেক ডলার খরচ করে তা বন্ধ করা উচিত . ভারতে সাথে শেখ হাসিনা যে সব চুক্তি করছে তা বাতিল করতে হবে. আমার দেশ টা সৎ ভাবে পরিচালনা করলে অন্তত ২ বছরে আমাদের অথনীতি অনেক শক্তি শালী হবে . বন্যার ব্যাপার টা যদি বলি তাহলে চীন কে তিসতা প্রকল্প টা দিয়ে ভারতের ব্যাবস্থা করতে হবে .
proshnoguloi jeno kemon ... eta tader mentality er reflection ....
ভারত আমাদের শত্রু রাষ্ট্র। ভারতের সাথে কোনোভাবেই কোনোরকম সম্পর্ক রাখা যাবে না। ভারতকে শত্রু ধরে নিয়েই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সাজাতে হবে।
না চাইতেই পাওয়ার অভ্যাস থেকে ভারত সহজেই বের হতে পারবে ?
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত কোন স্বৈরশাসকে নিয়ে কুটনীতি করা আর ছেলেমানুষি করার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এই সহজ কথাটা ভারতকে বুঝতে হবে।
ভারত না আমাদের বন্ধু ছিল, আর না কোনো দিন হবে। এই সহজ কথা যে বুঝতে পারে না সে, হই আহাম্মক, নাহলে ভারাতের দালাল। আর এই বন্যার পরেও কেও যদি ভারতকে বন্ধু বলে তাহলে সে অবশ্যই ভারতের দালাল
A sanke is always going to be a snake. Keep much distance as possible from modistani snakes.
ভারত কে বিশ্বাস করা মানে নিজের দেশের বিপদ ডেকে আনা। ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারে না। ভারত কখনো চায় না বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। প্রায় ১৬/১৭ বছরে ভারত বাংলাদেশ কে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা চাইনা ভারত আর আমাদের ক্ষতি করুক।
চমৎকার ভাবে বাংলাদেশীদের মনোভাব এবং আন্দোলনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ
হিংসুটে ভারত বাংলাদেশকে প্রকারান্তরে অঙ্গ রাজ্যই বানিয়েছিল। সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় বেসামাল হয়ে আমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে, আভ্যন্তরীন নাশকতা চালিয়ে কাবু করতে চায়। আমরা ডঃ ইউনুসকে প্রস্তাবিত মোদীর সঙ্গে বৈঠকে কঠোর অবস্থানে দেখতে চাই।
দালাল চাই না আমরা। দালালিমুক্ত দেশ চাই।
splendid !!
তথ্য বহুল।
ভারত কোন পরামশক্তি নয় যে তাদের কোন আদেশ পালন করতে হবে।হাসিনা ধবংস হোক!
ভারত কখনো পাল্টাবেনা ভারতের স্বার্থে ভারতের সাথে কূটনৈতিক ভাবে পাল্লা দেওয়া অত সহজ নয়।
ভারত শুধু বাংলাদেশে নয়, কোন দেশের জনগণের সাথেই তারা সম্পর্ক করে না, তারা শুধু বিভিন্ন দেশের সৈরাচারের সাথে সম্পর্ক করে। তাই ভারত সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আস্তে আস্তে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়ছে এবং হবে।
The article is very clear and open about the way a bilateral relationship between two neighbouring countries. That’s the way it should be.
একজন বাংলাদেশি হিসাবে চমৎকারভাবে এদেশের মানুষের মনের কথাগুলো তুলে ধরেছেন। তবে প্রশ্নকারীর উত্তরে এটুকু বলা দরকার ছিল যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু একদেশ নয়, উভয় দেশের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও জনমতের প্রতিফলন থাকা অত্যাবশ্যক উপাদান। ইন্ডিয়াকে বুঝতে হবে, আমরা তাদের কোন অঙ্গরাজ্য, কলোনি কিম্বা শোষনের ক্ষেত্র নয়, আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ ও তাদের মতোই সমমর্যাদার দেশ। গ্রাম্য মোড়লের মতো মাতব্বরি ও কর্ত্বত্ব ফলানোর আওয়ামী অপশাসনের পতন হয়েছে। জনগনের ইচ্ছা ও সমর্থনের ভিত্তিতে আমাদের নেতা ডঃ মুহম্মদ ইউনুস দেশ চালাচ্ছেন, মোদির ইচ্ছা বা স্বার্থ পূরনের কোন দায় নেই তাঁর।
চমৎকার