দেশ বিদেশ
এএফপি’র প্রতিবেদন
বিক্ষোভ, সংঘর্ষে উত্তাল বাংলাদেশ
মানবজমিন ডেস্ক
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার
বাংলাদেশে প্রতিবাদী হাজারো শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরকারপন্থিদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে রোববার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি, চাকু ও গুলি চালানো হয়। এতে বহু হতাহত হয়েছে। অনেক স্থানে ভয়াবহ সংঘাত দেখা দিয়েছে নতুন করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেনি সেনাবাহিনী ও পুলিশ। সাবেক একজন সেনাপ্রধান সেনাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই আহ্বান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে গতি দিয়েছে। ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র একটি যানের উপরে উঠে উল্লাস করেন। তারা বাংলাদেশের পতাকা দোলান। সে দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন সেনারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব ভিডিও যাচাই করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন জুলাইয়ে বেশ কয়েকদিন ভয়াবহ নৈরাজ্যে পরিণত করে। তাতে কমপক্ষে ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্থিরতা। জুলাইয়ের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেনারা। কিন্তু এই মাসে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বিপুল পরিমাণে রাস্তায় নেমে আসেন। সরকারকে পঙ্গু করে দিতে তারা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের হাতেই ছিল লাঠি। তারা ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল শাহবাগ চত্বরে সমবেত হন। তবে এ শহর এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে রাজপথে সহিংসতা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশ জুড়ে কারফিউ ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভ আয়োজনকারীদের হতাশ করে দিতে আবার মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর আল হেলাল এএফপিকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলায় নিহত হয়েছেন দু’জন যুবক। মৃতদের একজনের মাথায় কোপানো হয়েছে। অন্যজনকে গুলি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুন্সীগঞ্জ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ওদিকে উত্তরের জেলা কিশোরগঞ্জে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে দু’জন। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, সিলেট, মাগুরা, কুমিল্লা, বরিশাল এবং ফেনীতে নিহতদের মধ্যে আছে পুলিশ এবং চিকিৎসক। গত মাসের বিক্ষোভে পুলিশের দমনপীড়নের পর সমর্থকদের প্রস্তুতি নিয়ে দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনে নামার জন্য আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদ। রোববার তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত হোন এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করুন’।
ছাত্রদের এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে। রোববার তিনি সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম এবং গণগ্রেপ্তারে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, হতাশ ও বেদনাহত। এই অবস্থা গত তিনটি সপ্তাহ বাংলাদেশকে টালমাটাল করে দিয়েছে। অবিলম্বে রাস্তা থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। জনগণ এখন তাদের জীবন উৎসর্গ করতে আর ভয় পায় না। এসব ভয়াবহতার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার করতে হবে। ওদিকে বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামান শনিবার ঢাকায় সেনা সদর দপ্তরে কর্মকর্তাদের বলেছেন, জনগণের আস্থার প্রতীক হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারা সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের কল্যাণে তাই থাকবে এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে পাশে থাকবে। এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হলেও বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। এতে ব্যাখ্যা করা হয়নি যে, বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর সমর্থন আছে কিনা।
প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে যোগ দিয়েছেন সমাজের সব শ্রেণির মানুষ। আছেন চলচ্চিত্র তারকারা, সংগীতশিল্পী, সংগীতজ্ঞ ও শিক্ষক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে আন্দোলনের পক্ষে র্যাপ সংগীত। শাখাওয়াত নামে এক নারী বিক্ষোভকারী বলেছেন, এখন এটা আর কোটা বিরোধী আন্দোলন নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এই দেশে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারুক। গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক খাত গার্মেন্ট সেক্টরের ৪৭ জন ম্যানুফ্যাকচারারের একটি গ্রুপ রোববার শিক্ষার্থী, প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিটি জেলায় সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছেন। ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। জানুয়ারিতে প্রকৃত বিরোধী দলের বর্জন করা এক নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো অভিযোগ করছে যে, তার সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে তার ক্ষমতা ধরে রাখছেন। ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করছেন। এর মধ্যে আছে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।