প্রথম পাতা
গুলিতে মারা যান জিসান, শোকে আত্মহত্যা স্ত্রীর
ফাহিমা আক্তার সুমি
১ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবারআঠারো বছর বয়সী আব্দুর রহমান জিসান। ১৪ মাস আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন রাবেয়া মিষ্টিকে। দোকানে দোকানে পানি সরবরাহের কাজ করতেন। তার বাবা একজন প্রবাসী। জিসানের মা-স্ত্রী ও একমাত্র বোনকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায়। গত ২০শে জুলাই চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে আসেন বাবা বাবুল সরদার। তবে পরিবারটিতে এক মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই নেমে আসে আরেকটি শোক। জিসানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী মিষ্টি। শোক সইতে না পেরে স্বামীর মৃত্যুর ৯ দিনের মাথায় আত্মহত্যা করেন মিষ্টি। একসঙ্গে ২ জনকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবারটি।
জিসানের মা জেসমিন বেগম মানবজমিনকে বলেন, ২০শে জুলাই বিকালে রায়েরবাগ ২ নম্বর গলিতে শ্বশুরবাড়ির সামনেই গুলিবিদ্ধ হন জিসান। আমার দুই ছেলেমেয়ে। জিসান পরিবারের ছোট। ওরা আমার বাচ্চাটাকে গুলি করে মেরে ফেলছে। সে পানি সরবরাহের কাজ করতো। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কতোক্ষণ আগেও ৭টা পানি দিয়েছে। চারিদিকে যখন এই গোলাগুলির শব্দ তখন অনেকে আতঙ্কে বের হয়ে দেখতে যায়। এমনই আমার ছেলেও গলির মধ্যে বের হয়। ও যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল জায়গাটা তার শ্বশুরবাড়ির ছাদ থেকে দেখা যায়। গুলিটা এক চোখ হয়ে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়। গুলি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা বাবা বলে পড়ে যায় জিসান। পরে আশপাশে থাকা পরিচিতরা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আামি খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গেলে জিসানকে মৃত দেখতে পাই। পরেরদিন মেডিকেলের মর্গ থেকে তার মরদেহ দেয় আমাদের। লাশ আনতেও অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে।
রায়েরবাগে জিসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা ছেলে ও পুত্রবধূর ব্যবহার করা জিনিসপত্র ধরে আহাজারি করছেন। একমাত্র বোনটিও ঘরের কোণে কাঁদছে। তার বোনের দুই শিশুসন্তানও রয়েছে। পুরো ঘরটি যেন স্তব্ধ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা বলেন, আমরা কারও কাছে বিচার চাই না, আমরা বিচার চাই আল্লাহর কাছে। জিসানের বাবা বিদেশে ছিল। ছেলের মুখটা শেষবারের মতো দেখার জন্য একরাত একদিন ছেলের মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে দিয়েছিলাম। সে সোমবার সন্ধ্যার আগে দেশে এসে পৌঁছায়। নেট না থাকায় তাকে খবর পাঠানোরও কোনো উপায় ছিল না। পরে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মোবাইলে রিচার্জ করে তাকে খবর জানানো হয়। জিসানের কোনো সন্তান নেই। তিনি বলেন, ওদের দু’জনের মধ্যে অনেক ভালোবাসা ছিল। তাদের সম্পর্ক করে বিয়ে হয়। বউ তার স্বামীর মৃত্যুটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। জিসান মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহৃত পোশাক নিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখতো। কোনো খাবার খাওয়াতে পারিনি। স্বামীর শোকে ২৯ তারিখ দুপুরের দিকে ওর বাবার বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেয়। আমার ছেলের বউ তার বাবার বাড়িতে যাওয়ার সময় আমাকে বলে, আম্মু তুমি অসুস্থ মেডিকেলে যাও। আমি তাকে বুঝিয়েছি অনেক। সে যতদিন বাঁচবে মেয়ের মতো আগলে রাখবো। আশপাশে কোনো মানুষের কোনো কথায় কান দিবা না। পাগলামি করতো, দরজা আটকায় দিতো। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকেই বউ মারা যাওয়ার কথা বলতো সবসময়। আর বলতো তার স্বামীর পাশে তাকে যেন দাফন করা হয়। ছেলেকে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয় আর বউকে তার বাবার বাড়ি রংপুরে দাফন করা হয়। এই বাসায় মার্চের দিকে ভাড়া ওঠি। জিসানের জন্ম এই এলাকাতে ৩৮ বছর ধরে আমরা ঢাকায় থাকি। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতাম। আমাদের পরিবারে অনেক শান্তি ছিল। কী হয়ে গেল আমার? ছেলে পানি দিতো দোকানে দোকানে সেখান থেকে ১৫-১৬ হাজার টাকা বেতন পেতো। ঘটনার দিন সকালে ওর স্ত্রীকে নিয়ে বাজারে যায় প্রয়োজনীয় বাজার করে দিয়ে আবার বাইরে যায়। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না। ওর মনমানসিকতা শিশুদের মতো ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর করেনি। ওর ইচ্ছে ছিল একটা পানির লাইন কিনে ও ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করবে। এই ঘরে আর থাকতে পারছি না, দম বন্ধ হয়ে আসছে, বাসা ছেড়ে দিয়েছি।
জিসানের বাবা বাবুল সরদার বলেন, এমন ঘটনা ঘটবে আমি কখনো ভাবিনি। পাঁচ মাস হলো বিদেশ গিয়েছি। আট বছর ধরে বিদেশ থাকি। আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমার দেশ আমার সন্তানের লাশ উপহার দিলো। ঘটনার দিন সকাল থেকে আমার কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরে বাড়িতে অনলাইন-অফলাইন কল দিয়ে কোনোভাবে সংযোগ করতে পারছিলাম না। আমরা দুই জনের আয়ে আমাদের সুন্দর একটা সংসার ছিল। আমার ছেলেকে তার শখের মোটরসাইকেল কিনে দেইনি এক্সিডেন্টের ভয়ে। আর সেই ছেলেকে আজ গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলো।
হত্যাকারীদের অবিলম্বে বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি
যে কথায় কথায় বলে ”স্বজন হারানোর ব্যথা আমার চেয়ে আর কেউ ভাল বোঝে না”। এই গৃহবধুর চেয়ে, এই পিতা-মাতার চেয়েও কী বেশি?
May Allah's wrath fall up on this cold-blooded mass murderer
আর কত অনাকাংখিত মৃত্যুর খবর পেতে হবে জানিনা। আস্তে আস্তে পাথর হয়ে যাচ্ছি।
এই শোক সইবার মত না। সন্তানহারা পিতার হাহাকার, মায়ের আর্তনাদ, স্বজন শোক, সমব্যথী মানুষের অশ্রু জালেমদের জন্য অভিশাপ হোক।
লেখাটা পড়ে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। আল্লাহ ওদেরকে জান্নাতবাসী করুক। যার কারনে পিতা ও মাতা ছেলে হারা হলো আল্লাহ যেন তাকেও নিঃসন্তান করে দেয়। এছাড়া আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। সরি
বর্তমান সরকারকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে.
আমি কান্না আটকাতে পারিনাই , দু চোখ বেয়ে অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে , কারণ আমি নিজেও একজন প্রবাসী .
খুবই দুঃখ জনক। এভাবে আর কতো মায়ের বুক খালি হবে?
STEP DOWN VERY FAST.
আর কত রক্ত নিবি নে// আমার দেশকে মুক্ত করে দে//
ধিক্কার জানায়, ঠান্ডা মাথার খুনিদের বিচার চাই।
বর্তমান সরকারকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে। সর
আর কত রক্ত চায় সরকার?