দেশ বিদেশ
সহিংস হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি
মানবজমিন ডেস্ক
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবারযুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। ২০১৭ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল বেসবল টিমের প্র্যাকটিস চলাকালে বামপন্থি এক ব্যক্তি গুলি করে। এতে স্টিভ স্ক্যালাইস মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা। ওদিকে এক উন্মাদ সান ফ্রান্সিসকোতে প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে। ২০২২ সালের ওই ঘটনায় ন্যান্সি পেলোসির বয়োবৃদ্ধ স্বামীকে হাতুড়ি দিয়ে প্রহার করতে থাকে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে ডনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হওয়ার পর তার সমর্থকরা এত উত্তেজিত ও বিশৃঙ্খল আচরণ করেন যে, তারা ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংস হামলা চালায়। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট পদে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর যে হামলা হয়েছে তা নিন্দনীয়। এ কথা বলে প্রভাবশালী ইকোনমিস্ট বলছে, বেদনাদায়ক হলো যে, এ ঘটনা বিস্ময়কর নয়।
উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে টানা তৃতীয়বার তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। এই মনোনয়নে আর বাকি মাত্র কয়েকটি দিন। রক্তমাখা মুখ, মুষ্টিবদ্ধ হাত হয়তো সামনের দিনগুলোতে একটি আলাদা অর্থ বহন করতে পারে। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে নিয়ে কনভেনশনে ভিন্ন বার্তা দেয়া হতে পারে। শনিবার রাতেই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, এটা অবিশ্বাস্য যে, আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। গত দু’চার সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের জগৎ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যময় ছিল। এমনকি গত ২৭শে জুন ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে সরাসরি বিতর্কে বাইডেন ভালো পারফরমেন্স করতে পারেননি। তা নিয়ে বাইডেনের নতুন করে নির্বাচন করার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ডেমোক্রেট নির্বাচিত প্রায় ২০ জন কংগ্রেসম্যান প্রকাশ্যে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময়ে বেশ নীরব ছিলেন ট্রাম্প। ডেমোক্রেটরা যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে লেগে গেছেন, তখন তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে বেশির ভাগই মনে করছেন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ফেভারিট ট্রাম্প। এই হত্যাচেষ্টা থেকে তিনি রক্ষা পাওয়ায় তার সেই জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে তাকে থিওডোর রুজভেল্টের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ১৯১২ সালে রুজভেল্টের বুকে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অবস্থায় তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষত প্রাণঘাতী হয়নি। ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির সহিংসতা সত্ত্বেও এরই মধ্যে রিপাবলিকানরা সমর্থন করছেন ট্রাম্পকে। সেই সমর্থন এখন আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে ট্রাম্পকে গুলি করার এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য একটি পরীক্ষা। তিনি প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়েছেন। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই যুক্তরাষ্ট্রে। একই সঙ্গে ট্রাম্প নিরাপদ থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে তিনি যদি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের কাছাকাছি যান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তাদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন, তাহলে বাইডেনও সুবিধা পেতে পারেন। শনিবার রাতে নিজের রাজ্য দেলাওয়ার থেকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। জানানো হয়েছে, সেখানে ফেরার পর ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
এটাকে দ্রুত ক্ষত সারিয়ে তোলার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখছেন অনেকে। বাইডেনও তার প্রচারণায় বলে আসছেন ডনাল্ড ট্রাম্পের একনায়কত্ব ও স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতেই তিনি নির্বাচনে লড়াই করছেন। পক্ষান্তরে বাইডেনকে নানা দোষে দোষী করার চেষ্টা করছে রিপাবলিকানরা। শনিবার গুলির পর রিপাবলিকান সিনেটর জে. ডি. ভ্যান্স এক্সে লিখেছেন, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাইডেনের প্রচারণায় বাগাড়ম্বরতা সরাসরি ডনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টায় উদ্বুদ্ধ করেছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প এবার তার রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার মধ্যে অন্যতম এই জেডি ভ্যান্স। ইকোনমিস্ট লিখেছে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে লড়াই করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এরই মধ্যে দলের ভেতরেই তিনি বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন। এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিজস্ব লড়াইয়ের চেয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি থাকবে বেশি ট্রাম্পের প্রতি।