ঢাকা, ২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার

মারুফ কিবরিয়া
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এবং সবচেয়ে  আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। অভিযোগ ছিল অন্তত দশ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ থেকে চম্পট দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক মামলার আসামিও হতে হয়েছে পি কে হালদারকে। বর্তমানে তিনি অর্থপাচার মামলায় ভারতের কারাবাসে রয়েছেন। অবশ্য দুদকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে পি কে হালদার দেশ থেকে কোনো টাকা নিয়ে পালাননি বলে দাবি করেছেন। বরং দেশের প্রথম সারির এক ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে দেশ ছাড়তে হয় বলে উল্লেখ করেন সেই চিঠিতে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পি কে হালদারের পক্ষে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে তার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এক ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম উল্লেখ করে দায়ী করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে পি কে হালদারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুরো অবস্থান তুলে ধরা হয়। 

পি কে হালদারের পক্ষে পাঠানো সে চিঠিতে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালে দুদক অনুসন্ধানের আগে-পরে কখনোই কানাডায় যাননি পি কে হালদার। বরং সে বছরের ২২শে অক্টোবর ভারতে যান তিনি। তার দু’দিন পরেই চট্টগ্রামভিত্তিক ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারের সঙ্গে দেখা করতে সিঙ্গাপুর যান এনআরবি গ্লোবালের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরপর বেশ কিছুদিন মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ঘোরাঘুরির পর পি কে হালদার আবার ভারতে ফিরে যান এবং সেখানেই অবস্থান করেন। ভারতে অবস্থানকালে নিজের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেয়ার জন্য দেশে ফিরতে চান। এ জন্য ২০২০ সালে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থও হন পি কে হালদার। আদালত আদেশ দিলেও পরে সে আদেশটি তার বিপক্ষে যায়। চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রামভিত্তিক ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারের কৌশলের কারণেই পি কে হালদার দেশে ফিরতে ব্যর্থ হন। এরমধ্যে কর্ণধারের পরামর্শে ভারতীয় পাসপোর্টও সংগ্রহ করেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এই এমডি। তবে পি কে হালদারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারই সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের ইডি’র মাধ্যমে গ্রেপ্তার করিয়েছে তাকে। 

কী নিয়ে দ্বন্দ্ব ব্যবসায়ীর সঙ্গে পি কে’র?
পি কে হালদারের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে চট্টগ্রামভিত্তিক ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, পি কে হালদার মেধাবী একজন ব্যক্তি। তার মেধা যোগ্যতার কারণেই বেক্সিমকো গ্রুপ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পদে চাকরি পান। এ ছাড়া তার মেধা ও যোগ্যতা দেখেই চট্টগ্রামভিত্তিক ওই শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চাকরি দেন। প্রায় ছয় বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি চাকরি করেন। পরবর্তীতে ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারই পি কে হালদারকে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন পি কে হালদার। ২০১৮ সালের শেষদিকে তাকে ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে চাপ দিতে থাকেন। সে সঙ্গে পি কে হালদারের সব ব্যবসা সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করেন। 

ওই চিঠিতে এও জানানো হয়, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় দুদকের তালিকায় প্রভাব খাটিয়ে কৌশলে ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধার পি কে হালদারের নাম ঢুকিয়ে দেন। পরে কর্ণধারের ঘনিষ্ঠ একজনের পরামর্শে ভারতে চলে যান এনআরবি গ্লোবালের সাবেক এই এমডি। যদি দেশত্যাগ না করতেন তাহলে পি কে হালদারের জীবননাশও হতে পারতো বলে দাবি করা হয় ওই চিঠিতে। 

টাকা লুটের ঘটনা যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় 
পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকাকালীন নানা অনিয়ম ও প্রভাব খাটিয়ে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বেশ কিছু মামলাও করেছে দুদক। তবে পি কে হালদারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেননি। বরং দেশেই কিছু ব্যবসায়ী এসব টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করা হয় চিঠিতে। বলা হয়, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানির হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মধ্যে মেজর (অব.) মান্নানের সানম্যান গ্রুপ নিয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা, বিশ্বাস গ্রুপ নিয়েছে ২০ কোটি টাকা, ম্যাং নিউজপ্রিন্ট ২০ কোটি টাকা। এভাবে বিভিন্ন নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে শত কোটি টাকা আত্মসাতের কারণেই বিআইএফসি’র লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা লুটপাটের পেছনে পি কে হালদার জড়িত নন বলে জানানো হয়েছে  সেই চিঠিতে। আর এসবের নেপথ্যে ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারের হাত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
প্রসঙ্গত, অর্থ আত্মসাৎ ও  পাচারের অভিযোগে পি কে হালদার এবং তার বিভিন্ন সহযোগীদের বিরুদ্ধে অন্তত ত্রিশটির বেশি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলার মধ্যে গত বছর একটিতে ২২ বছরের সাজা হয় তার।  

পাঠকের মতামত

তার পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে । অপরাধী বলে এই দেশ ছেড়েছে । হলমার্কের বিচার হল অথচ হলমার্কের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি দুর্নীতি করে কিভাবে দেশ ছাড়লো?

monowar
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৭:২৪ পূর্বাহ্ন

নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিৎ

আইয়ুব
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৬:৫১ পূর্বাহ্ন

কোন অপরাধী কখনও তার অপরাধ স্বীকার করে না । তবে তার বর্ণিত প্রতিষ্ঠান ও জড়িত তা অসম্ভব নয় । দুদক এর সূত্র ধরে এদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চালু করতে পারে ।

Kazi
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। পিকে হালদার ফেরত দিচ্ছে না কেন ?

আজিজ
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:১৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status