দেশ বিদেশ
সংসদে বাজেট আলোচনায় ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত
সবচেয়ে ব্যয়বহুল আইটেম হলো হেলথ সার্ভিসেস
সংসদ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২৪, রবিবারকুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন, আজকে এডুকেশন, মেডিকেশন, কালটিভেশন যাই বলি না কেন সব চেয়ে ব্যয়বহুল আইটেম হলো হেলথ সার্ভিসেস। এখানে পরীক্ষা, নিরীক্ষা, গবেষণা এবং চিকিৎসার যে উপকরণ আছে প্রত্যেকটার দাম আকাশচুম্বী হয়ে আছে। গতকাল সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষা এবং চিকিৎসা পণ্য হয়ে গেছে। আপনার টাকা আছে আপনি চিকিৎসা পাবেন, আপনার টাকা নেই তো আপনি চিকিৎসা পাবেন না। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক যারা মধ্যম শ্রেণির নিচে আছেন তাদের বেলায় কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা এখনো অনেকটাই উন্নতির পর্যায়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায় এবং ডাক্তার ও ডাক্তারদের আবাসিক সমস্যা সমাধান না হলে কখনই সেটা দেয়া সম্ভব হবে না। একটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেখানে ১৫, ২০ বা ২৫ জন ডাক্তারকে পদায়ন করা হয় সেখানে দু’জন বা তিন জন ডাক্তারের থাকার জায়গা নেই। মেডিকেল সার্ভিস সার্বক্ষণিক আবাসিক সার্ভিস। সেটার জন্য আবাসিক সুবিধা দেয়াটা সবচেয়ে অপরিহার্য।
অবশ্যই আমাদের ডাক্তারদেরকেও সেই সার্ভিসটা দিতে হবে। প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হয়েছে। এখন সুযোগ এসেছে প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে নন প্র্যাকটিসিংয়ের আওতায় আনা যায়। নন প্র্যাকটিসিং ডাক্তারদের সুবিধাটা হলো, তাদেরকে যদি আমরা সুযোগ-সুবিধা দেই, যদি ডাক্তারদের নন-প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্সসহ আবাসিক, ছেলে- মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় অনেক ডাক্তার নন- প্র্যাকটিসিংয়ে রাজি হবেন। আমি অনুরোধ করবো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগীয় শহরগুলোতে নন-প্র্যাকটিসিং করা হোক। এ সময় প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই বাজেটে কালোটাকা এবং সাদা টাকা নিয়ে কথা তুলেছি। অর্থাৎ অপ্রদর্শিত আয়, প্রদর্শিত আয় যেটা আমরা ট্যাক্স দিয়েছি। আমি একজন করদাতা হিসেবে যখন ৩০ লাখ টাকার উপরে আমার আয় থাকে আমাকে ৩০ ভাগ কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু যিনি টাকা দেখাননি গত বছর তিনি কিন্তু ১৫ ভাগ দিয়ে সে টাকাকে বৈধ করে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শিত আয় বা বৈধ ট্যাক্স করে নিচ্ছেন। এতে করে সঠিক করদাতা যারা তারা কিন্তু কর দিতে অনিচ্ছা পোষণ করবে। আমরা কালোটাকা এবং সাদা টাকার কথা বলি কখনো কেউ গ্রে-মানি অর্থাৎ ইনফরমাল ইকোনমি যেটা আছে সেটাকে কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না- সেই ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কিছুই বলেননি। এই গ্রে-মানিটা সেটাও কিন্তু আন-ট্যাক্স মানির চেয়েও আরও অনেক বেশি খারাপ অর্থাৎ অপ্রদর্শিত আয়ের চেয়েও খারাপ। সেটাকে যদি সংকুচিত করা না যায় তাহলে মানিলন্ডারিং কোনো অবস্থাতেই স্তিমিত হবে না বা বন্ধ হবে না। আলোচনায় অংশ নিয়ে সিলেটের ভয়াবহ বন্যার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি সিলেটের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ব্যাপক বন্যা, পানি বাড়ার কারণে মানুষের দুর্বিষহ অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি নদীগুলোর নাব্যতা বাড়িয়ে স্মার্ট নদীতে রূপ দেয়ার দাবি জানান। বন্যায় জনগণের কষ্ট দ্রুততার সঙ্গে লাঘবে সরকারের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আহ্বানসহ বন্যা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপকল্প-২০০১ সালে যে ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক সুখি-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ১১টি বিশেষ অধিকার উল্লেখ করেছি।
যার প্রথমটি- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। চতুর্থটি হলো- লাভজনক কৃষির জন্য সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানো। চলতি বছরের ধানের উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষকদের হার্বেস্টার মেশিন দেয়ায় একটা ধানও কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নষ্ট হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের প্রতিটি কৃষক যাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। পর্যাপ্ত সার ও যন্ত্রপাতি দেয়া হচ্ছে।