দেশ বিদেশ
মন্ত্রীর বাসার লিফটে মারামারি থানায় মামলা
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ জুন ২০২৪, রবিবারমৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে আরেক কর্মকর্তা মারধর করেছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তা পলাতক। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পরীবাগ এলাকার দিগন্ত টাওয়ারে মন্ত্রীর বাসার লিফটে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তার নাম মলয় কুমার শূর। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন)। আর অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তাকে পরিচালক পদমর্যাদার একটি পদে পদায়ন করে। কিন্তু মারধরের অভিযোগ ওঠার পর তার পদায়ন স্থগিত করে মন্ত্রণালয়।
শাহবাগ থানায় করা মামলার এজাহারে মলয় বলেছেন, বৃহস্পতিবার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী কিছু প্রশাসনিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য তার বাসায় যেতে বলেছিলেন। পরে তিনি মন্ত্রীর বাসায় যান। কাজ শেষ করে সোয়া ৯টার দিকে দিগন্ত টাওয়ারের লিফট দিয়ে নিচে নামেন। লিফটের সামনে আগে থেকে ভারী কোনো বস্তু নিয়ে অবস্থান করছিলেন আজিজুল। লিফটের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মলয় শূরকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের ভেতর ফেলে দেন। হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা ও নাকে আঘাত করে জখম করেন। মলয় চিৎকার করলে নিরাপত্তাপ্রহরীরা এগিয়ে আসেন। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান আজিজুল। এরপর মলয়কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তার মুখমণ্ডল ফেটে যাওয়ায় সেলাই দিতে হয়েছে ও স্থায়ী ক্ষত হয়েছে। এ ছাড়া বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। মলয় বলেছেন, আজিজুল তাকে অতর্কিত আক্রমণ করেছেন। হত্যার উদ্দেশ্যে কোনো ভোতা বস্তু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন।
মলয় শূর বলেন, আজিজুল ইসলামকে মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার পরিচালক পদমর্যাদার একটি পদে পদায়ন করে। যেহেতু তিনি (মলয়) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), তাই এ বিষয়ে মন্ত্রীকে মতামত দিয়েছিলেন। বিভাগীয় মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় আজিজুলের নতুন পদায়ন হয়। আইন অনুযায়ী তিনি কথা বলেছেন। এটা কারও পক্ষে যেতে পারে, বিপক্ষেও যেতে পারে। এ কারণে আজিজুল তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, একজন কর্মকর্তাকে আরেকজন কর্মকর্তা মেরেছেন। একজন কর্মকর্তা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছি। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে, আজিজুলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১২ই অক্টোবর বহিরাগত এক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদারের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তখন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওইদিন মহাপরিচালক তৎকালীন পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে যান। আজিজুল তখন তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মহাপরিচালককে চাপ দেন।
মহাপরিচালক তাকে বলেন, এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তখন তার সঙ্গে চেঁচামেচি করেন আজিজুল। পরে কক্ষ ত্যাগ করতে চাইলে মহাপরিচালকের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেন ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয় আজিজুলকে। মহাপরিচালককে লাঞ্ছিত করার এ ঘটনার আগের বছর (২০২২ সালের ৩০শে ডিসেম্বর) প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অশোভন, অসৌজন্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত বার্তা আদান-প্রদান করার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায়ও দোষী সাব্যস্ত হলে গত ১২ই মে তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়। আজিজুল এক সময় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি গত ১লা জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলা হলে তাকে প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।