খেলা
সেন্ট ভিনসেন্টে ‘লা সুফ্রিয়া’ বাংলাদেশ
ইশতিয়াক পারভেজ, সেন্ট ভিনসেন্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) থেকে
১৫ জুন ২০২৪, শনিবার
সেন্ট ভিনসেন্ট, যেখানে সমুদ্রের পাড়ে বসে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায় একটি দিন। এখানে সন্ধ্যা নামতে নামতেই শুরু হয়ে যায় ছুটির আমেজ। কিছু খাবার দোকান আর পানশালা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় নেমে আসে সুনসান নীরবতা। শুক্রবার বাংলাদেশের জন্য তো সারা দিনটাই বিশ্রামের। আগের দিন নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বলতে গেলে শেষ আাটে এক পা দিয়েই রেখেছে। অন্যদিকে এই শহরে হোটেল থেকে রাতে বের হলে নিজের গাড়ি না থাকলে নিশ্চিত ভাবেই হাঁটতে হবে। এখানে সাগর ও পাহাড় যেন একে অন্যের। বলতে পারেন হয়তো বিধাতার নিজ হাতে সাজানো এই দেশ, এই নগর। তবে এমন সুন্দরের মাঝেও লুুকিয়ে আছে চাপা ভয়। কারণ, এখানে নিঃশ্বাস ফেলছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ‘লা সুফ্রিয়া’। যা মাঝে মাঝে উগড়ে দিতে চায় নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা সব কিছু। যেমনটা হয়েছিল ৩ বছর আগেও। হঠাৎ করেই ধোঁয়ার কুন্ডুলী গোটা শহরকে ঢেকে ফেলেছিল। এখানে এলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও যেন এই লা সুফ্রিয়ার মতো হয়ে ওঠে। নিজের ভিতরে জমে থাকা সব উজার করে দিয়ে জেগে ওঠে। ২০০৯ এ প্রথম দেশের বাইরে টেস্ট জয়ের রেকর্ডটাও এখানে গড়েছিল টাইগারারা। জিতেছিল ওয়ানডে সিরিজও। এবার যখন বিশ্বকাপের সুপার এইটে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা। সেখানে ফের তারা নিজেদের আগ্নেয়গিরির মতো ভেতরের সব উগড়ে দিয়ে ফিরেছে জয়ের ধারায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্যের অপেক্ষায় টাইগাররা । নেদারল্যান্ডসকে হারানোর নায়ক বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ২০২২ থেকে তিনিও এই ফরম্যাটে দেখা পাননি ফিফটির। তবে তার সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। ডাচদের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৬ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। সেই সঙ্গে দলও জিতেছে ২৫ রানের ব্যবধানে। ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ডাচরা গুঁড়িয়ে যায় ২ উইকেট হাতে রেখে ১৩৪ রানে। বলতে গেলে ব্যাটে বলে দারুণ এক জয় তুলে নেয় নাজমুল হাসান শান্তর দল। সেন্ট ভিনসেন্টের এই ভেন্যু বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত। এখান থেকেই সাকিব বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘ওভার অল ওয়েস্ট ইন্ডিজই আমার জন্য ভালো কিছু নিয়ে এসেছে। আমার ক্যারিয়ারজুড়ে যদি দেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমার অনেক ভালো ভালো স্মৃতি আছে। স্বাভাবিকভাবে ওই একটা আত্মবিশ্বাস আমার ভেতর কাজ করছিল যে এই একটা জায়গা যেখানে আমার ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। দলের সর্বোচ্চ সাফল্য ৮ নাম্বার হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়া। ২০০৭ প্রথমবারের মতো বসে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ আসর। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আসর শুরু করা বাংলাদেশ চমকেই দিয়েছিল সবাইকে। কিন্তু এরপর অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। সেই আসরে নাটকীয় ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ রানের জয়ে শেষ হাসি অবশ্য হাসে ভারত। ২০০৯ এর আসরে ভারতের বিপক্ষে ২৫ রানে হারের পর অ্যায়ারল্যান্ডের কাছে ৬ উইকেটে হেরে আসর শেষ করেছিল টাইগাররা।
এরপর ২০১০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে ২১ রানে আর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৪ রানে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। সেবার ফাইনালে আস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। ২০১২ শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানে আর পাকিস্তানের কাছে ৮ উইকেটের হারে আসর থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। সেবার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৩৬ রানে হারিয়ে প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে উইন্ডিজ। ২০১৪ নিজেদের মাটিতে আফগানিস্তান-নেপালকে হারিয়ে ভালো শুরু পেলেও হংকংয়ের কাছে হারতে হয় স্বাগতিকদের। পরের পর্বে ভারত, উইন্ডিজ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। সেই আসরে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে সাঙ্গা-মাহেলার শ্রীলঙ্কা।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ভারত। স্বাগতিকদের বিপক্ষে তীরে এসে তরী ডোবে বাংলাদেশের। ১ রানের হারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল আসরে জয়বঞ্চিত থাকতে হয় বাংলাদেশকে। ২০২১-এ ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর কেটেছে বিভীষীকাময়। তবে ২০২২ এ অস্ট্রেলিয়াতে মিলেছে এই আসরের সর্বোচ্চ সাফল্য। মূল পর্বে মিলেছে প্রথম বারের মতো দুই জয়। নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়েকে হারায় টাইগাররা। চলতি বিশ্বকাপে এরই মধ্যে ২ ম্যাচ জিতে সেই সাফল্য ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। কাল নেপালকে হারাতে পারলে সব কিছু ছাড়িয়ে উঠে যাবে শেষ আটে। যা হবে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনন্য অর্জন।