দেশ বিদেশ
র্যাবের সদস্য সেজে ডাকাতি করতো চক্রটি
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ জুন ২০২৪, শুক্রবারর্যাব পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসের ১৯ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- হামিম ইসলাম (৪৫), মো. জিন্নাহ মিয়া (২৭), মো. আমিন হোসেন (৩০), রুবেল ইসলাম (৩৩) ও মো. আশিকুর রহমান (৪২)। বুধবার রাজধানীর রামপুরা, উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, ২টি খেলনা পিস্তল, ২টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি র্যাবের ক্যাপ, ১টি হ্যান্ডকাফ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং ছিনতাইকৃত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ৬ই জুন বিকালে গাজীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার ৩ নম্বর গেটের সামনে কয়েকজন র্যাব পরিচয়ে কারখানার ৩ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেন। এরপর শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ট্রাক ভাড়ার ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেন র্যাবের এসব ভুয়া সদস্য। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৫ জন একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্য। গ্রেপ্তার হামিম এই ডাকাত চক্রের প্রধান। ডাকাত চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। চক্রটি ডাকাতি কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো। চক্রটি প্রতি মাসে ২ থেকে ৩টি ডাকাতি করতো এবং ডাকাতির টাকা চক্রের সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতো। হামিম গত ৩-৪ বছর আগে ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পড়ে। পরে সে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১০-১২ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে। তার নির্দেশনায় চক্রের অন্য সদস্যরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলাকায় ডাকাতির টার্গেট নির্ধারণ করে তাকে তথ্য প্রদান করতো। হামিম একটি মামলায় কারাভোগের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতদের তার চক্রে অন্তর্ভুক্ত করে। এ ছাড়াও তিনি পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল।
আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, গ্রেপ্তার রুবেল দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি পেশার সঙ্গে জড়িত। সে এই ডাকাত চক্রের মূলহোতা হামিমের প্রধান সহযোগী। এর আগে সে বরিশাল, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডিবি পরিচয়ে বেশকিছু ডাকাতি সংঘটিত করেছে। এসব ঘটনার দিন ভুক্তভোগীদের ব্যাংক থেকে বের হওয়ার তথ্য মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে হামিমকে জানায় রুবেল। সে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২ বছর কারাভোগসহ অন্যান্য মামলায় বেশ কয়েকবার কারাভোগ করেছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, মাদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার জিন্নাহ ও আমিন এই ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা টার্গেট ব্যক্তিদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে উঠাতো। গ্রেপ্তার জিন্নাহর বিরুদ্ধে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং ওই মামলায় সে প্রায় ২ বছর কারাভোগ করেছে। আশিক এই ডাকাত চক্রের নবীন সদস্য। সে ডাকাতি সংঘটনের পর সম্ভাব্য কোন কোন রাস্তা দিয়ে পালানো সুবিধাজনক হবে তা নির্ধারণ করে চক্রের প্রধান হামিমকে জানাতো। আশিক গাড়ি চালানোর পাশাপাশি রাজধানীর আশপাশে বিভিন্ন সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই করতো। পরবর্তীতে জিন্নাহর মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচিত হয়ে এই ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়।
মূলত আশিক গাড়ি চালনায় পারদর্শী এবং রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার আঞ্চলিক রাস্তাঘাটগুলো পরিচিত হওয়ায় হামিম আশিককে ডাকাত চক্রে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। চক্রের সদস্যরা নিজেদের র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতো। তারা গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করতো। টার্গেট ব্যক্তিকে অপহরণের পর টাকা ছিনিয়ে নিতো চক্রটি।
পাঠকের মতামত
এদের উৎপাত ও দৌরাত্য বন্ধ করার পথ আল্লাহ্'র হৃওলা করে দেওয়া ।