বিশ্বজমিন
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে অলৌকিকভাবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর রক্ষা
মানবজমিন ডেস্ক
১৫ মে ২০২৪, বুধবার
রনিম হিজাজি। একজন ফিলিস্তিনি মা। ইসরাইলি নৃশংস হামলায় কীভাবে তিনি বেঁচে গেছেন, কীভাবে তার গর্ভস্থ সন্তান বেঁচে আছে, কীভাবে এক বছর বয়সী ছেলে আজুজকে হারিয়েছেন- তার বর্ণনা দিয়েছেন সিএনএনকে। গাজায় তাদের ভবনের উপরে ড্রোন চক্কর দিচ্ছিল। বেশ শব্দ হচ্ছিল তা থেকে। রনিম হিজাজি বুঝতে পারেন খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এমন সময় নিজের স্ফীত পেটের কাছে হাত রেখে গর্ভস্থ শিশুকে আগলে রেখে বলেন, ‘আমার যা হবে, ওরও তাই হবে।’ এরপর যখন হামলা হলো, তখনকার কথা তার মনে নেই। শুধু পরের কথা তার ব্রেনে দোলা দিচ্ছে। তিনি বলেন- হামলার কথা অনুভব করতে পারি না। তারপর যখন চোখ খুললাম, দেখি ধ্বংসস্তূপের নিচে। তার সম্বিত ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে এক বছর বয়সী ছেলে আজুজকে চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন। এক সময় তিনি শাশুড়ির আর্তচিৎকারের শব্দ পান।
তিনি বলেন- আমার শাশুড়ি আজুজের দেহ আমার পেটের ওপর পেলেন। তিনি তাকে টেনে তুললেন। তিনি আজুজের শরীরটি উঁচু করছেন। কিন্তু আজুজের মাথাটা আমার পেটের ওপর পড়ে রইলো। এ ঘটনা ঘটে ২৪শে অক্টোবর। তখন থেকে বেঁচে থাকার কারণ নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন রনিম হিজাজি। প্রথমে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। পরিবারের কাছে এর জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। পক্ষান্তরে তারা তাকে সাহায্য করেছেন খান ইউনুসে তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িতে তল্লাশি চালাতে। রনিম হিজাজি বলেন- আমার পা দেখা যাচ্ছিল না। সামান্য একটুকরো মাংসের সাহায্যে আমার হাত ঝুলেছিল শরীরের সঙ্গে। সেটাকে আমি টেনে আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। এ জন্য তা টেনে এনে আমার পেটের উপর রেখে দিই।
তাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন রনিম হিজাজি মারা গেছেন। তখন তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসকরা বিষয়টিতে আমল দিলেন। তারা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান মরিয়মকে ভূমিষ্ঠ করান। রনিম হিজাজি বলেন- যখন আমার এই কন্যাসন্তান প্রথম নিঃশ্বাস নিলো, তখন আমার ভেতর প্রাণ ফিরে এলো। চিকিৎসকরা আমাকে বললেন- অলৌকিক ঘটনা এটা। কাতারের রাজধানী দোহায় একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে খুবই ম্লান কণ্ঠে নিজের এসব কাহিনী বলছিলেন রনিম হিজাজি। তার বাম হাত কেটে ফেলা হয়েছে। দুই পায়েই মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তার চিকিৎসায় ‘বোন গ্রাফট’ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।