অনলাইন
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে নিজের দক্ষতা তুলে ধরলো বাংলাদেশ
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ সপ্তাহ আগে) ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩২ অপরাহ্ন
শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দক্ষতা এবং শিক্ষার অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ একটি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছে। যোগ্যতার স্বীকৃতি এবং কর্মশক্তির মানোন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে। ঐতিহ্যগত TVET সিস্টেম একটি শিল্প-প্রাসঙ্গিক এবং দক্ষতা-কেন্দ্রিক মডেলে পরিণত হয়েছে। এই পদক্ষেপ তার উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। একইসঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারদের দ্বারা উল্লেখযোগ্য আর্থিক অবদান এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labour Organization বা ILO) দ্বারা প্রদত্ত প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে তুলে ধরে। তবে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই, ২৩ এবং ২৪ এপ্রিল গ্লোবাল স্কিলস ফোরাম, আইএলও দক্ষতা এবং কর্মসংস্থান শাখা দ্বারা আয়োজিত একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার মূল ফোকাস ছিল বাংলাদেশ। পরিবর্তনশীল বিশ্বে দক্ষতার চ্যালেঞ্জ এবং অংশীদারিত্ব ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলও সদর দফতরে অনুষ্ঠিত তার উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেলে, বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সেইসাথে নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের সিনিয়র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা সরকারের প্রধান উন্নয়ন অংশীদাররা।
আইএলও-এর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হাউংবো উচ্চ-স্তরের প্যানেলে যোগ দিয়েছিলেন। হাউংবো বাংলাদেশ সরকার, আইএলও, ইইউ এবং কানাডার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের পারস্পরিক শক্তিশালী অবদানকে স্বীকৃতি দেন। হউংবো সবুজ দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজনের গুরুত্বের ওপর নজর দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসাথে স্কিল ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমের অ্যাক্সেসিবিলিটি এবং অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক সংহতি ও কর্মসংস্থানকে উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন ।
বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন, বিশেষ করে নারী, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্যতা এবং সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। এই প্রচেষ্টাগুলি সরকারের বর্ণিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত । তা সত্ত্বেও, মন্ত্রী শিল্পের উচ্চ-দক্ষ চাহিদা এবং সাধারণভাবে স্বল্প-দক্ষ শ্রমশক্তির মধ্যে দক্ষতার অভাব দূর করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। মন্ত্রী শিল্প খাত এবং উন্নয়ন অংশীদারদের আজীবন দক্ষতার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার প্রচারে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান, বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি এবং কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো উদীয়মান শিল্প খাতে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদ দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও শিক্ষানবিশের প্রয়োজন, যাতে শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত হয়। তিনি শিক্ষানবিশ মডেলগুলির গুণমান এবং বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্যবসায়কে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনার পক্ষে পরামর্শ দেন এবং শিল্প-প্রাসঙ্গিক TVET-এর ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সেক্রেটারি সাকি রেজওয়ানা, শ্রমবাজারের উপযোগী উন্নত দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে নেমে কর্মরত শ্রমিকরা যে বাধার সম্মুখীন হয় সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সামাজিক সংলাপ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির দ্বারা বৃহত্তর সম্পৃক্ততার পক্ষে সরব হয়ে আজীবন শিক্ষার সুবিধার্থে এবং কর্মীদের দক্ষতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি শুধু দেশীয় কর্মসংস্থানের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্যও বাংলাদেশি কর্মশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউ-এর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষ অভিবাসনের জন্য বাংলাদেশ এবং প্রধান ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অংশীদারিত্বের ওপর, একইসঙ্গে ইইউ-এর সমর্থনের পাশাপাশি গেটওয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে শিল্প খাতের উৎপাদন ভিত্তির বৈচিত্র্যকে সমর্থন করার পরিকল্পনার উপর জোর দেন।
রাষ্ট্রদূত থমাস ওয়াগনার, জাতিসংঘে ইইউ প্রতিনিধিদলের ডেপুটি হেড অংশীদার দেশগুলিতে দক্ষতার আধুনিকীকরণের জন্য ইইউ-এর চলমান সমর্থন নিশ্চিত করেছেন, বিশেষ করে আগামীতে শিল্প-প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছেন।
প্যাট্রিসিয়া ম্যাককুলাগ, জেনেভাতে জাতিসংঘে কানাডার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তথা মিনিস্টার-কাউন্সেলর কানাডার সাম্প্রতিক উদ্যোগের অর্থায়ন প্রকল্পগুলিকে তুলে ধরেন যার লক্ষ্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্বল সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন।তিনি লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে আইএলও এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য কানাডার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্যানেলে উপস্থিত সমগ্র প্রতিনিধিরা ২০০৭ সাল থেকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার, আইএলও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের প্রশংসা করেন। সকলেই স্কিল সিস্টেমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং ভবিষ্যতে তাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য চলমান অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন