ঢাকা, ১১ মে ২০২৪, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

সরজমিন আইসিডিডিআর,বি’

দিনে আসছে ৫ শতাধিক রোগী

সুদীপ অধিকারী
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
mzamin

দাবদাহে ওষ্ঠাগত জীবন। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা রোগবালাই। প্রতিনিয়তই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, পেটের পীড়ায় আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। আর এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। শুধুমাত্র রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতালেই দিনে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

গতকাল আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম তার ৪ বছরের মেয়ে মাইশাকে নিয়ে এসেছিলেন আইসিডিডিআর,বিতে। রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার সকাল থেকে আমার মেয়ের পেট ব্যথা হচ্ছিল। এরপর তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দিনে ১০-১২ বার বাথরুমে যাওয়ার পর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রথমে এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাইয়েছি। কোনো কাজ হয়নি।

বিজ্ঞাপন
পরে অবস্থা বেগতিক দেখে এখানে নিয়ে এসেছি। তারই মতো তিন বছরের শিশু অনিককে নিয়ে এসেছেন মা নাসরিন আক্তার। বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আমার ছেলেটা হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ে। ওইদিন সন্ধ্যায় ওর শরীরে হাত দিয়ে দেখি জ্বর চলে এসেছে। একপর্যায়ে খিঁচুনি শুরু হয়। এরপরই বমি আর পাতলা পায়খানা। এখন আগের চেয়ে একটু ভালো আছে। কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া শিশু সুমাইয়ার মা নাসরিন আক্তার বলেন, তার মেয়েও ডায়রিয়া চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে। তিনি বলেন, দিন-দশেক আগে আমার মেয়ের প্রথমে ডায়রিয়া দেখা দেয়। জ্বরও ছিল। তখন একটি ফার্মেসি থেকে শুনে ওষুধ খাওয়ালে কমে যায়। কিন্তু এর কয়েকদিন পর আবার খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসে সঙ্গে প্রচ- বমি।

আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, দু’সপ্তাহ আগেও দিনে পাঁচশ’র নিচে রোগী আসতো হাসপাতালটিতে। গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন রোগীর পরিমাণ পাঁচশ’ ছাড়িয়েছে। গত ২১ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত ৭ই এপ্রিল ৪৬১ জন, ৮ই এপ্রিল ৪৬৯ জন, ৯ই এপ্রিল ৪১৪ জন, ১০ই এপ্রিল ৪২৯ জন, ১১ই এপ্রিল ৪৪৯ জন, ১২ই এপ্রিল ৫৯৫ জন, ১৩ই এপ্রিল ৫২৫ জন, ১৪ই এপ্রিল ৪৩৪ জন, ১৫ই এপ্রিল ৪৯১ জন, ১৬ই এপ্রিল ৪৭৪ জন, ১৭ই এপ্রিল ৪৩২ জন, ১৮ই এপ্রিল ৪৪৫ জন, ১৯শে এপ্রিল ৪৫৬ জন, ২০শে এপ্রিল ৫৪৩ জন, ২১শে এপ্রিল ৫২২ এবং ২২শে এপ্রিল ৫৮৫ জন, ২৫শে এপ্রিল ৫৬৮ জন, ২৬শে এপ্রিল ৫১২ ও ২৭শে এপ্রিল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৯৭ জন ভর্তি হয়েছেন। 

আইসিসিডিআর,বির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এ তীব্র গরম সপ্তাহ জুড়ে থাকতে পারে। তাই আমরা আশঙ্কা করছি এ বছর অতিরিক্ত গরম পড়ায় যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মে-জুনে দেখা যাওয়ার কথা সেটা আরও আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ, এখনই প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ’র মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে।

আইসিডিডিআর,বির এসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে কারও তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। বিশেষত মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। কিন্তু এবার এপ্রিলের শেষেই ডায়রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ’র মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে সব বয়সের মানুষই ভর্তি হচ্ছে। তবে এসময় শিশুদের ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যেমন, বাইরের খোলা শরবত খাচ্ছে, সেখানে যে বরফ থাকে তাতে প্রচুর জীবাণু থাকতে পারে। তাই  রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার না খাওয়া ও বাইরে বের হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এই গরমে প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে বলে জানান তিনি। 

আইসিডিডিআর,বির এসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট (নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশন) ডা. সারিকা নুজহাত বলেন, যেহেতু গরমটা বেশি, স্বাভাবিকভাবে মানুষ বেশি তৃষ্ণার্ত ও পিপাসার্ত থাকে। আমাদের পরামর্শ হলো যেসব ছোট বাচ্চা বুকের দুধ খায়, তাদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটি বাচ্চাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া বাইরের খাবার-দাবারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার খুবই কম হয়, যার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বড়দের মধ্যে যারা বাইরে কাজ করেন তাদের বেশির ভাগই গরমে পিপাসা মেটাতে বাইরের বিভিন্ন শরবত ও খোলা পানি পান করেন। তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো বাইরের এসব খোলা পানীয় শরবত কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, সাধারণত আইসিডিডিআর,বিতে দিনে ৭০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনো সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে রোগী বাড়ছে। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যতœ নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status