ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর

ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি স্বজনদের

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্ণ হলো। বুধবার সকাল থেকে রানা-প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এছাড়া আহত নিহতের পরিবারও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। রানা প্লাজায় ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর সময় চোখের জলে স্মৃতিচারণা করেন আহত শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা। তারা ভবন মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা। রানা প্লাজার ছয় তলায় কাজ করতেন মনির হোসেন। ভবন ধসে পড়লে সেটির নিচে তিন দিন চাপা পড়ে থাকার পর উদ্ধার করা হয় তাকে। পায়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই আঘাতের ক্ষত। মনির হোসেন বলেন, পাঁচ মাস আগেও অসুস্থ হয়ে পড়ি। লিভারে সমস্যা। রক্তবমি হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলে লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু টাকা পাই নাই। একই কারখানার শ্রমিক তাসলিমা বলেন, ১১ বছর পরেও সেদিনের ঘটনা ভুলতে পারেন না। সবসময়ই সেই দিনের কথা মনে পড়ে। আজীবন মনে হয় ভুলতে পারবেন না। কেউ কিছু করল না আমাদের জন্য। এখন বোতল কুড়ায়ে খাই। পা ভাঙা। কোনো কাজ করতে পারি না। ১২ বছর কী করল সরকার? বছর হলেই নেতারা আসে। ছবি তোলে। কিছুই পেলাম না। বিচারও হলো না। আমাদের এমন যারা করলো বিচার হলো না। এখন দোয়া করি, যাতে আল্লাহ বিচার করে।

অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এখনও শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা বুঝে পাননি। এজন্য উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা। টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মামলার বিচারে সরকারের সদিচ্ছার দরকার। মামলা করেছে সরকার। তারা চাইলে এতো দিনে বিচার হতো। ১১ বছরে এ মামলায় ৪৮ বার দিন পড়েছে। গতকাল সরকারের প্রসিকিউটর এক সভায় বলেছেন নানা রকম সমস্যা আছে। ৫০০’র মতো সাক্ষীকে পাওয়া যায় না। তারা বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন, আসা-যাওয়ার খরচ পান না। সেখান থেকে আইনজীবীরাও টাকা পান না। আগামী বছর ঘটনার এক যুগ হবে। তার আগে আমরা এ মামলার বিচার চাই। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজার ১১ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসা কোনোটাই দেয়া হয়নি। আরও দুঃখজনক হলো, ১১ বছরেও এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীরা দিব্যি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আমরা চাই অবিলম্বে রানা প্লাজা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের বিচার করতে হবে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এ বিষয়ে আমাদের যতটা সুযোগ আছে আমরা কাজ করছি। আমাদের সীমার মধ্যে যতটা সম্ভব কারখানা পরিদর্শন করে তাদের আমাদের পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছি যাতে তারা ঠিক করে। পরবর্তীতে আবারও যাচাই করছি, তারা করছে কি-না।  গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম বলেন, রানা প্লাজা নির্মম হত্যাকান্ডের ১১ বছর আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ঘটে দেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। ২৪ এপ্রিলের ওই ভবনধস নেহাত কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং তা সুস্পষ্টভাবেই মালিকপক্ষের অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড। আট তলা ভবনে অবৈধভাবে স্থাপন করা গার্মেন্ট কারখানাটি ধসে পড়ে নিহত হন ১ হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক। ধ্বংসস্তপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সহস্রাধিক শ্রমিক গুরুতর আহত হন; যাঁদের অধিকাংশই কর্মক্ষমতা হারিয়ে পঙ্গুত্ব জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন। তাদের সবাই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা শুধু দেশ নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমকে। প্রসঙ্গত; ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দূর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই দুর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় শিল্পদুর্ঘটনা।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status