ঢাকা, ৪ মে ২০২৪, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

তীব্র গরমে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার

দেশের অন্যান্য জেলার মতো তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ঘরে-বাইরে কোথাও এক মুহূর্ত স্বস্তি মিলছে না। চারপাশে কাঠফাটা রোদ আর তাপ উঠছে মাটি থেকে। সকাল থেকে থাকছে রোদের তাপ, ভ্যাপসা গরম। এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। রোদের তীব্র তাপে মানুষ বাইরে বের হতে পারছেন না। গতকাল  দুপুরে  চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩  ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে এক দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত তিনদিনে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতও হয়নি।

জানা যায়, বৈশাখ শুরুর দিন কয়েক আগ থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন
এর ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল ৯টার পর থেকে রোদের তাপ অসহনীয় হয়ে উঠছে। আর  সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকছে একই পরিস্থিতি। গত শনিবার (২০শে এপ্রিল) থেকে তিনদিনের জন্য হিট অ্যালার্টও জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। কর্ণফুলী নদীর ঘাটে ভেড়া জাহাজ থেকে লবণ, সার, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বস্তায় ভরে সেই বস্তা পিঠে চড়িয়ে গুদামে নিয়ে যান কয়েক শত শ্রমিক। কাঠফাটা রোদে ঘামে ভেজা শরীর, পিঠ যেন পুড়ে কয়লা! নগরীর মাঝিরঘাট, বাংলাবাজারসহ আশপাশের এলাকায় এভাবেই তাপপ্রবাহের মধ্যেও বোঝা বয়ে চলেছেন শত শত শ্রমিক। এরমধ্যে শ্রমিক সাইদুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। স্ত্রী, দুই সন্তান, মা আর ছোট বোন নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম শহরের ছোটপুলে ছোট্ট একটি কুঠুরিতে।

সাইদুল  বলেন, ‘পরিবার আছে, সংসার আছে, বাসা ভাড়া আছে, খাওন-দাওন আছে। কষ্ট হলেও কী করবো, আমার একলার ওপর চলে সংসার। আমাদের উপায় নাই। এখন ৪২ ডিগ্রি গরম পড়ছে, ৫২ ডিগ্রি পড়লেও আমাদের বের হইতে হবে। আমাদের কাজ করতে হবে।’ অক্সিজেন এলাকার মুদি দোকানদার মাইনুদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে তীব্র গরম। গরমে কাস্টমারও কমে গেছে অনেকটা। দিনের বেলা বেচাকেনা হচ্ছে। যা হচ্ছে সন্ধ্যার পর।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে রোববার তা মৃদু তাপদাহে রূপ নেয়। এ তাপমাত্রা আগামী কয়েকদিন একই বা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদগণ। অর্থাৎ এই মাসে গরম থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। জানা গেছে, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কানাডার ক্যালগভরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের গবেষকদের সম্পৃক্ততায় পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে। ভূ-উপগ্রহ থেকে দিনের ও রাতের তাপমাত্রার ধরন বিশ্লেষণ করে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, ২ হাজার সাল থেকে পরবর্তী ২০ বছরে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৯২ ডিগ্রি বেড়েছে।

ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের রাতের তাপমাত্রা রাতের ঢাকার তাপমাত্রার চেয়েও বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর থেকে রাতের বেলায় যে বায়ু চট্টগ্রাম শহরের উপর দিয়ে বয়ে যায় সেটি ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে। তাছাড়া এখানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং পাহাড় কাটায় আগের মতো বৃষ্টিপাত না হওয়াকেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ বলা হয়। এদিকে চট্টগ্রামের প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারেক  বলেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা অস্থায়ী ঝড়ো বা দমকা হাওয়ার আকারে ২৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। দেশের ৪৯ জেলাতেই এখন তাপপ্রবাহ বইছে। 

গত রোববার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটিসহ বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

 

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status