ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

বাড়ি ফেরা হলো না ইকবাল হোসেনের

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

 ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য ১৫শ’ টাকায় আগামী ১৭ তারিখের বাসের অগ্রিম দু’টি টিকিটও কিনে রেখেছিলেন সাভারের জোড়পুল এলাকায় তেলের লরি উল্টে ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ঋণগ্রস্ত ইকবাল হোসেন। একটু বেশি পরিশ্রম করে বাড়িতে থাকা দুই মেয়ের জন্য ঈদে নতুন জামা-কাপড় কেনা, বাবা-মায়ের জন্য কিছু ঈদ উপহার নেয়া ও বাড়িতে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য দিনরাত লেবারের কাজ করতেন তিনি। গতকাল ভোরে সিমেন্ট বোঝাই গাড়ি থেকে সিমেন্ট নামানোর জন্য জোড়পুল এলাকায় যান তিনি। এ সময় মহাসড়কে একটি তেল বোঝাই লরি উল্টে গিয়ে আগুন ধরে গেলে সেই আগুনে পুড়ে মারা যায় ইকবাল হোসেন। নিহত ইকবাল হোসেন যশোর জেলার চৌগাছা থানার বরনি গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী মঞ্জুয়ারাকে নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ী এলাকার জিয়ারুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। তাদের মধ্যে ইকবাল হোসেন ট্রাকের লেবার হিসেবে কাজ করতেন এবং তার স্ত্রী স্থানীয় চলন্তিকা হাউজিংয়ে অবস্থিত এনইসি গ্রার্মেন্টসে হেলপারের কাজ করতেন। বাড়ির মালিক জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ইকবাল অনেক ভালো ছেলে ছিলেন। অনেক কষ্ট করে দিন পার করলেও কখনো কারও কাছ থেকে ধার-দেনা করতেন না। বাড়ির ঋণ পরিশোধের জন্য সবসময় অতিরিক্ত কাজ করতেন। সকালে মিলন ও ইকবাল একসঙ্গে কাজে যায়। গাড়িতে আগুন লাগার পর মিলন কোনোরকমে জামা-কাপড় ফেলে দৌড়ে আসতে পাড়লেও ইকবাল ঘটনাস্থলেই পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। আমি দেশের সরকার ও জনপ্রতিনিধি ও হৃদয়বান লোকদের অনুরোধ করবো আপনারা একটু ইকবালের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তা না হলেও তাদেরও ঋণের দায়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে। নিহত ইকবালের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম জানায়, মঙ্গলবার ভোরে আজানের আগেই ভাত খেয়ে তার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে কাজে বের হয় ইকবাল। বলেছিল আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসবে।
কিন্তু সে এভাবে আগুনে পুড়ে লাশ হয়ে ফিরবে সেটা জানা ছিল না। একথা বলতে বলতেই বার বার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা কোনোরকমে তাকে ধরে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মঞ্জুয়ারা আরও বলেন, আমাদের দু’টি মেয়ে। সুমাইয়া (১৬) ও সাদিয়া (৮)। গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ ও অটো চালিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলছিল। কিছুদিন আগে বড় মেয়ে সুমাইয়ার বিয়ে দিয়েছেন। ওই বিয়েতে বিভিন্ন এনজিও এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছিল ইকবাল হোসেন। এ ছাড়া গ্রামের অনেকের কাছ থেকেও প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা ধার নিয়ে মেয়ের বিয়ে দেয়। পাওনাদারদের টাকার চাপে গত ৫ মাস আগে দুই মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে টাকা রোজগারের জন্য ঢাকা চলে আসে ইকবাল ও মঞ্জুয়ারা দম্পতি। 
মঞ্জুয়ারা বলেন, আমি যা বেতন পেতাম সেটা জমাতাম, আর স্বামী যে টাকা রোজগার করতো তা দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে যাচ্ছিল আমাদের। এরইমধ্যে কিছু টাকা ঋণ পরিশোধও করা হয়েছে। আমার স্বামী এভাবে আগুনো পুড়ে মারা গেল এখন আমি কার কাছে যাবো, কি করবো? ঋণের টাকাই বা কীভাবে শোধ করবো। সাভার হাইওয়ে থানায় লাশ নিতে আসা বিল্টু রহমান বলেন, এখানে ওদের কেউ নেই। খবর পেয়ে আমরা দূর থেকে সাহায্য করার জন্য এসেছি। মেয়ের বিয়ের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ঢাকায় এসে ছেলেটা অকালে পুড়ে মারা গেল। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেয় এবং তার পরিবারকে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেয়।

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status