দেশ বিদেশ
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান
নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটছে
স্টাফ রিপোর্টার
৪ মার্চ ২০২৪, সোমবারসরকারি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতায় বারবার অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। জবাবদিহিতা থাকলে এমন হতো না। যারা প্রভাবশালী তারা কি এতগুলো মানুষের জীবনের চেয়েও প্রভাবশালী? তারা কীভাবে দিনের পর দিন এগুলোর পুনরাবৃত্তি করছেন? এত দুর্ঘটনার পরও কী রাষ্ট্রের টনক নড়বে না? গতকাল কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বেইলি রোডের ভবনটিতে বাণিজ্যিক অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রভাবশালী মহলের চাপ ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। যে কারণে ভবনটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহার ও রেস্তরাঁ পরিচালনা দুটি ভিন্ন ব্যবহার। যেখানে মাত্র একটি সিঁড়ি, এমন একটি ভবনে রেস্তরাঁ চলতে পারার কথা না। তাহলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন তাদের ভূমিকা কি কেবল নোটিশ দেয়া? তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে রাষ্ট্রের যে ২২টি আইন রয়েছে তাকে কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে কোথায় কোথায় ব্যত্যয় আছে তা দেখতে হবে। মানবাধিবার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিদগ্ধ ও বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইডের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার মধ্যদিয়ে সামগ্রিক গাফিলতির আরেকটি উদাহরণ আবার সামনে এলো। অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা একটি আকস্মিক ও সহজাত বিষয়। এটি ঘটতেই পারে। বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরেও অগ্নিকাণ্ড হয়, কিন্তু ঢাকার সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের মতো নির্মমতা থাকে না। অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা আঁতকে ওঠার মতো। কারণ এদেশে নগর উন্নয়নের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, রয়েছে সেবাসুবিধা নিশ্চিত করার মতো প্রতিষ্ঠানও। নাগরিক সুবিধাসমূহ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এসব প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে বেশ সক্রিয় এবং বেশ কঠোরও। দেশে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের জন্য আইন আছে, ফায়ার সেফটি সম্পর্কিত আইনও যথেষ্ট রয়েছে, অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে দেশে মোট ২২টি আইন এবং হাইকোর্টের একটি জাজমেন্ট রয়েছে। এই ২২টি আইনের মধ্যে ১৩টি মৌলিক আইন এবং ৯টি হলো সাব-অর্ডিনেট। কিন্তু সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, ঢাকা এতটাই অপরিকল্পিত যে এখানে পুরোপুরি পরিকল্পিত নগরায়ণ সম্ভব নয়। কিন্তু যেটা সম্ভব, সেটা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন; যার মাধ্যমে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটাকে তুলনামূলক কিছুটা কমিয়ে আনা। এর জন্য প্রতিটি সংস্থা তার নজরদারি কার্যক্রমগুলো নিশ্চিত করবে। কিন্তু এর জন্য যে ধরনের অভিযান দরকার, সেটার অনুপস্থিতি আছে। সরকার জিরো টলারেন্স মুখে বললেও সংস্থাগুলো পরিচালনায় বিভিন্ন পর্যায়ে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এ ধরনের ঘটনায় জমি বা ভবনের মালিক থেকে শুরু করে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার কারা দায়ী, তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। ভবনের মিশ্র ব্যবহার সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও ভাবা দরকার। ভবনে আলো-বাতাস প্রবাহের সুযোগ না রেখে কাঁচ দিয়ে ঘিরে পুরো ভবনকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে বিপদকে যেভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, সেটা পেশাজীবী, স্থপতি, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ-সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। পাশাপাশি, আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় বাণিজ্যিকভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকা উচিত ছিল, তদারকিতে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এর দায় এড়াতে পারে না।