প্রথম পাতা
আনসার বিল নিয়ে প্রশ্ন
মরিয়ম চম্পা
২৬ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবারপুলিশের মতোই আটক-তল্লাশি-জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার সদস্যরা। এ বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। এ বিলের মাধ্যমে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছেন আনসার সদস্যরা। নতুন এই বিলে আনসারে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।
এই বিল নিয়ে নানা মহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রসঙ্গে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক বিচারপতি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি। প্যারামিলিটারি বা আনসার সদস্যদের এই বিল প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ তো দীর্ঘদিন এবং দীর্ঘসময় ধরে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব গ্রেপ্তার, তদন্ত কাজগুলো করে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে কাউকে তল্লাশি কিংবা গ্রেপ্তার করতে হলে সেটা পুলিশ করবে এবং সরকার এই দায়িত্ব তাদেরকে দিয়েছেন। আইন মোতাবেক তারা তাদের কাজগুলো করবেন। এখানে আনসার সদস্যরা দীর্ঘসময় ধরে পুলিশ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। এখন যদি হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠিত কোনো কর্তৃত্বের ওপর এ ধরনের ক্ষমতা বা পুলিশের দায়িত্বে ভাগ বসাতে আসলে এটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি বঞ্চনা, ক্ষোভ এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হবে।
সরকারের সংস্থা যেগুলো আছে কেউ কিন্তু কারও জায়গা ছাড়তে চাইবে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, এটা কোনো স্বাভাবিক আইন হিসেবে আমি দেখছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আনসারদের কী কাজে ব্যবহার করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা যাবে না। তবে যেকোনো প্যারামিলিটারি ফোর্সকে অর্থাৎ আনসার ব্যাটালিয়নকে ক্ষমতা দিয়ে গ্রেপ্তার বা তল্লাশি করার আইন পাস করা হলে এটা স্বাভাবিক না। এই ধরনের ক্ষমতা সাধারণত প্যারামিলিটারি কোনো বাহিনীকে দেয়া হয়ে থাকে না। আমাদের এখানেও আগে ছিল না। কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে এটা বলতে পারছি না। কিন্তু এটা স্বাভাবিক না। তিনি বলেন, যদি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আনসার ব্যাটালিয়নকে ব্যবহার করা হয় এবং এ ধরনের ক্ষমতা তাদের প্রয়োগের অধিকার দেয়া হয় তাহলে এর প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, গ্রেপ্তার-তল্লাশির ক্ষমতা সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধিতে) উল্লেখ আছে কাদেরকে এ ধরনের ক্ষমতা দেয়া যাবে এবং কাদের দেয়া যাবে না। এই ক্ষমতা তাদেরকে যদি দেয়া হয় সেটা মনে হয় ভালো হবে না। বিশেষ করে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দেয়াটা অনুচিত। যদি কেউ ধারণা করে থাকেন নির্বাচনকে সামনে রেখেই তাদেরকে এ ধরনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে তাহলে সেটা অযৌক্তিক হবে না। এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্যারামিলিটারি বা আনসার ব্যাটায়িলনদের আইন সম্পর্কে তো কোনো জ্ঞান নেই। তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। আজ আইন পাস হলো। পক্ষান্তরে তাদেরকে কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হলো না। কম শিক্ষিত বা আধা শিক্ষিতদের এই ক্ষমতা দেয়া হলে আইন এবং এই পাওয়ারের ‘অ্যাবিউজ’ বা অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। জুডিশিয়ারির সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক। এই ধরনের বিল পাস হওয়ার আগে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করা, আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা, সংসদে ডিবেট করার বিষয় রয়েছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এই বিলটি করা ঠিক হচ্ছে না বলে জানান তিনি।