ঢাকা, ১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বহিষ্কৃতদের ফেরাতে সবুজ সংকেত বিএনপি’র

কাজী সুমন
২২ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার
mzamin

বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতাদের ফেরাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এলাকায় যারা জনপ্রিয়, অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড যাদের ভালো এবং ছোটখাটো ভুল রয়েছে, এমন নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে শিগগিরই। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগেই তাদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে। ধাপে ধাপে দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এই তালিকায় কুমিল্লার সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে এমন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে পদায়ন করা হবে। পরের ধাপে মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন তাদেরগুলো প্রত্যাহার করা হবে। ইতিমধ্যে গত ৫ই অক্টোবর চট্টগ্রামের মহিলা দলের এক নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে ছাত্রদলের সাবেক ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। গত ৩ মাসে ধাপে ধাপে অন্তত ৫০ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে দলটি। 

সূত্র জানিয়েছে, গত মাসে অভিমানে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।

বিজ্ঞাপন
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে অপেক্ষার পরও বিএনপি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় অন্য দলে যোগ দেন। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিষ্কৃত নেতাদের কেউ কেউ অন্য দলে যোগ দিতে পারেন কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন- এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ভেড়াতে উদ্যোগ নেয় বিএনপি’র হাইকমান্ড। ভুল স্বীকার করে নয়াপল্টন কার্যালয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা নেতাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়। ইতিমধ্যে বহিষ্কৃতদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে দুই শতাধিক নেতার তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকা দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

এদিকে গত ৫ই অক্টোবর কুমিল্লার সুয়াগাজীতে রোডমার্চের পথসভায় সাক্কুর কর্মী-সমর্থকরা শোডাউন করেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এ ঘটনাটিকে দলে ফেরানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সাক্কুর অনুসারীরা। ওদিকে ১লা অক্টোবর খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এ সময় তার অনুসারীরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। 

বিএনপি’র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,  ২০১৯ সালে ১৬ই জানুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি’র হাইকমান্ড। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন সহস্রাধিক নেতা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি’র ৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। বিজয়ী ১৭ জনসহ ২০ নেতা আবেদন করেছেন। এ ছাড়া  সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন দুই শতাধিক নেতা। বহিষ্কৃত এসব নেতা দলীয় ফোরামে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তরে এমন আবেদনের স্তূপ জমা হয়। এদিকে যারা আবেদন করেছেন তারা প্রায় প্রতিদিনই নয়াপল্টন কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

কুমিল্লা সিটির পরপর দুইবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মানবজমিনকে বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ৪ মাস আগেই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবেদন করেছি। আমি দলের জন্য কাজ করতে চাই। এই মুহূর্তে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে সামনের আন্দোলনে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবো। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, উনি (মির্জা ফখরুল) আমাকে ছেলের মতো স্নেহ করেন, আমাকে বলেছেন- ধৈর্য ধরো, অপেক্ষা করো।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, কেন আমাদের দলে ফিরিয়ে আনা উচিত এসব কারণ উল্লেখ করে মহাসচিবের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ৫টি আবেদন করেছি। এখন অপেক্ষায় আছি। আশা করছি- দল একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা বিএনপি’র পাশে থাকতে চাই, সামনের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমার বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে খুলনার ৫২০ নেতা পদত্যাগ করেছিল। তাদের সবাইকে দলে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। মহাসচিব আমাদের অপেক্ষা করার কথা বলেছেন।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে যেসব বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অনেক বেশি মামলা রয়েছে তাদের কারাগারে পাঠাতে পারে। তখন নেতৃত্বের একটা সংকট তৈরি হতে পারে। তাই ইতিপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে এনে দলীয় কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেয়া উচিত। তাদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তবে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status