দেশ বিদেশ
২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৫ কোটি ডলার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারদেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসার গতি চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও কম। এ মাসের প্রথম ২২ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। গত আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৫৬ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স আসে ২০৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলিত বছরের জুন থেকে টানা তিন মাস রেমিট্যান্স কমছে। জুনে ২২০, জুলাইয়ে ১৯৭ এবং আগস্টে ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা, তাতে গত মাসের চেয়েও রেমিট্যান্স আসা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে ১৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ১১ লাখ ডলার।
এই চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এনেছে অগ্রণী ব্যাংক, ৩ কোটি ৬১ লাখ ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এনেছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স এনেছে ৯২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ২৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এনেছে। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৪১ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ রাখার শর্ত দিয়েছিল। বর্তমানে তার চেয়ে কম রিজার্ভ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ডলারের দাম বাড়তে না দিয়ে স্থানীয় মুদ্রা টাকাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে, তাতে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। এই নীতি কোনো ভাবেই কার্যকর হচ্ছে না।
শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি মানতে চাইছেন না, ফলে রিজার্ভেরও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬২ কোটি ডলার কমেছিল। তারপরের সাত দিনে রিজার্ভ কমছে আরও ৩০ কোটি ডলার। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। গত ৩১শে আগস্ট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) মিলে রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পণ্য বা সেবা খাতের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় দাম হবে ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এদিকে খোলাবাজারে নগদ ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়। ফলে ডলারের দামের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, ডলারের দামে এমন ব্যবধান থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা আরও কমতে পারে। এর বিপরীতে হুন্ডির প্রতি আগ্রহ বাড়বে প্রবাসীদের। কারণ, ডলারের দাম যেখানে বেশি পাওয়া যাবে, প্রবাসীরা সেদিকেই ঝুঁকবেন।