বিনোদন
‘চরিত্রাভিনেতাদের সম্মান ও সম্মানী নেই’
সুজন নাজির
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
একটি শক্তিশালী গল্প পূর্ণতা পায় প্রয়োজনীয় সব চরিত্রের নান্দনিক উপস্থাপনের মাধ্যমে। প্রধান চরিত্রের পাশাপাশি মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু এসব চরিত্র নিয়েই গল্পের ধারাবাহিকতা তৈরি হয়। একটা সময় সিনেমা বা টেলিভশন নাটকে নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি অনেক চরিত্রাভিনেতা দরকার হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রধান চরিত্রের বাইরে খুব অল্পসংখ্যক নাটকেই চরিত্রাভিনেতার দেখা মেলে। নাটক বা সিনেমা হয়ে পড়ছে নায়ক-নায়িকা নির্ভর। এমনকি গল্পও লেখা হচ্ছে প্রধান চরিত্রের অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে মাথায় রেখে। সেখানে গল্পে একঘেয়েমিতা তৈরি হলেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বর্তমানে, এক-দুইজন অভিনেতানির্ভর নাটক নির্মাণের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। ওইসব গল্পে অন্য চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও কৌশলে বাদ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটকে এমনটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক নির্মাতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিডিয়ায় টিকে থাকতে হলে এর বিকল্প নেই। কারণ, টেলিভিশন নাটকের বাজেট খুবই কম। চার-পাঁচদিনের শুটিং আমাদের এখন দুইদিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। অনেক অভিনেতানির্ভর নাটক হলে খরচ বেড়ে যায়। যেটা বেশির ভাগ প্রযোজকরা দিতে রাজি নন। চরিত্রাভিনেতাদের গুরুত্ব টিভি নাটকে দিন দিন কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ কারণে অনেক অভিনেতা মিডিয়া ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এনটিভি ‘হা-শো’ সিজন-৩ চ্যাম্পিয়ন হৃদয় আল মিরু এ বিষয়ে বলেন, এখন ভালো গল্পের চেয়ে ভাইরাল বিষয়টা গুরুত্ব বেশি পাচ্ছে। ভালো অভিনয়ের চেয়ে যার ভিউয়ার বেশি তাকে নির্বাচন করা হচ্ছে। তার অভিনয় খুব ভালো মানের না হলেও এমনটা করা হচ্ছে। নির্মাতারাও এমন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পেছনে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করছেন। যার ফলে একটি নাটকের বাজেটের অনেকটাই সেখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এখনকার নাটকে চরিত্রাভিনেতারা কাজ পাচ্ছে কম। হাতে গোনা যে ক’জন কাজ করছেন তা খুবই সামান্য। তিনি আরও বলেন, ৯০’র দশকের নাটকে চরিত্রাভিনেতারা বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবার দরকার। না হলে নাটকের মানের অবস্থা খুব খারাপ হবে। আরেকজন জনপ্রিয় চরিত্রাভিনেতা হেদায়েত নান্নু বলেন, চরিত্রাভিনেতারা কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। অনেকেই না পারছেন মিডিয়া ছাড়তে, না পারছেন অন্য পেশায় যেতে। তাদের সঙ্গে নির্মাতারাও খুব ভালো আচরণ করেন না। প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সেটে দেরি করে এলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একজন চরিত্রাভিনেতা দেরি করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। বর্তমান বাজারে চরিত্রাভিনেতাদের সম্মান ও সম্মানী নেই।