ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’

৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে উঁচু টিলা ওয়াচ টাওয়ার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবারmzamin

সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামের প্রকল্পটি ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপ, উঁচু টিলা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। বাঘের ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে হবে গবেষণা। সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে। ফলে মানুষের হাতে সুন্দরবনের বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা বন বিভাগের।

প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপ। ইতিমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় যাতে বাঘগুলো আশ্রয় নিতে পারে এ জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১২টি উঁচু টিলা তৈরি করা হবে। শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় বাঘের আশ্রয়স্থলে দুর্বৃত্তের আগুন নিয়ন্ত্রণে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এই টাওয়ার থেকে ওই এলাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে লাগা আগুন দেখে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারবেন বনরক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ছাড়া সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে যাতে বাঘ প্রবেশ না করতে পারে সে জন্য প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলোনের বেড়া (ফেন্সিং) দেয়া হবে। এটি সফল হলে পরে ৬০ কিলোমিটার ফেন্সিং করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় বাঘের ক্যানাইন (মুখে থাকা সামনের বড় দু’টি দাঁত) ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হবে। এজন্য সুন্দরবন থেকে বাঘের মল সংগ্রহ করা হবে। এই মলের মাধ্যমেই বাঘের দাঁতে সংক্রমিত ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবেন দেশীয় গবেষকগণ। অন্যদিকে সুন্দরবনে বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ৩৪০ জন ভিটিআরটি (ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম) সদস্য ও ১৮৪ জন সিপিজি (কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ) সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরসঙ্গে লোকালয়ে আসা দু’টি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রাকার লাগানো হবে। বাঘের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বনকর্মী-কর্মকর্তা সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদের অ্যাপস দেয়া হবে। তারা এই অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বাঘের গতিবিধি দেখতে পারবেন। এর ফলে লোকালয়ে বাঘ এলে তারা দ্রুত সুন্দরবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

এ ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ট্রাকার, নাইলোনের বেড়া, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ও প্রশিক্ষণ উপকরণসহ বেশকিছু আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। প্রকল্প শেষে প্রকল্পের সব কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টরি ফিল্ম করা হবে। যা পরবর্তীকালে সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় দায়িত্বে আসা কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবে বাঘ না থাকা এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের মাধ্যমে বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণের কথা থাকলেও খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের সময় বাঘের উপস্থিতি পাওয়ায় বাঘ না থাকা এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের বিষয়টি প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এদিকে ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর আওতায় সুন্দরবন ও বাঘ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এই প্রশিক্ষণের ফলে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঘ রক্ষায় কাজের আন্তরিকতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
সুন্দরবন সুরক্ষায় কাজ করা ভিটিআরটির সদস্য মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী এলাকার লাকি বেগম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাঘ ও সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করি। আমাদের এ বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান খুবই কম। শুনেছি আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ দিলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবো।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ খুব ভালোভাবে চলছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বাঘ জরিপের জন্য ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিপিজি, ভিটিআরটি প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হবে। সর্বোপরি বাঘ সংরক্ষণ ও বাঘ বাড়ানোর জন্য বেশকিছু কাজ করা হবে। এ ছাড়া পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম ভিডিও করা হবে। যা দিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টরি ফিল্ম তৈরি করা হবে। এই ফিল্মটি পরবর্তীকালে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

এক জরিপে দেখা গেছে একেকটি বাঘের পিছনে বছরে ব্যয় হয় ৪.৮৫ কোটি টাকা। এরপরও শুনবেন যে এই টাকাও অপ্রতুল।

Mohsin
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

বাজেট অস্বাভাবিক রকম বেশি মনে হচ্ছে । তথাপি কাজ সঠিক মত হবে না । বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য । সর্বত্র লুটপাটের চিন্তা ভাবনা ।

Kazi
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:৫৬ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status