ঢাকা, ১৪ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

গ্যাসের দাম ২ চুলায় ৫১২ টাকা করার প্রস্তাব তিতাসের

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৩, বুধবার
mzamin

দেশে দফায় দফায় বাড়ে গ্যাসের দাম। যা গ্রাহকদের ঘাড়েই পড়ে। কিন্তু সেবা দেয়ার বেলায় গড়িমসি। ঢাকার সব এলাকায় ঠিকমতো গ্যাসও পাওয়া যায় না। দুপুরের দিকে নিবু নিবু হয়ে যায় চুলা। কোথাও কোথাও দিনের অনেক সময় চুলা জ্বলে না। কিন্তু মাসের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে শিল্পে গ্যাসের দামও বেড়েছে সরকারের নির্বাহী এক আদেশে। আবারো পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহকদের চুলার বিল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

বিজ্ঞাপন
দুই চুলায় মাসিক গ্যাসের বিল ৫১২ টাকা বাড়াতে চায় বিতরণ সংস্থা। আর এক চুলায় মাসে ৩৯০ টাকা। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে। অনেকে বলছেন, এই প্রস্তাব সাধারণের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়লে মানুষ আরেক দফা সংকটে পড়বে। এই মূল্যবৃদ্ধি হলে সামগ্রিক খাতেও এর প্রভাব পড়বে। 

গত জুনে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ সময় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা করা হয়। তবে মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য মাসে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার ও এক চুলায় ৫৫ ঘনমিটার ধরা হয়। এতে দুই চুলার মাসিক বিল ১ হাজার ৮০ ও এক চুলার বিল ৯৯০ টাকা ঘোষণা করা হয়। এর ১০ মাস পর এতে আপত্তি জানিয়েছে তিতাস।

বিইআরসি’র কাছে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছে তিতাস। এতে বলা হয়, কমবেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা বা তথ্য বিশ্লেষণ না করেই ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে কারিগরি ক্ষতি বেড়েছে এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তিতাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে বিইআরসি সূত্র বলছে, তিতাসের অভিযোগ সঠিক নয়। গত বছর গ্যাসের দাম নিয়ে শুনানির সময় তিতাসের ৩ লাখ ২০ হাজার ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের গ্যাস বিল বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দুই চুলার গ্রাহকেরা গড়ে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন মাসে। কিন্তু এটি কিছুটা বাড়িয়ে ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য। একই সময় বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে ঘনমিটারের পরিমাণ আরও কমানো হবে।

বিইআরসি’র সাবেক সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, যাচাই-বাছাই করেই দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও এটি আরও কমানোর চিন্তা ছিল কমিশনের। তিতাসকে সতর্ক করে বেশি কমানো হয়নি। অবৈধ সংযোগ দিয়ে একটি গোষ্ঠী দিনদুপুরে ডাকাতি করছে আর কারিগরি ক্ষতির দায় চাপাচ্ছে মিটার ছাড়া গ্রাহকদের ওপর।

তিতাসের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রসঙ্গে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন,  তিতাসের এরকম অযৌক্তিক প্রস্তাব বা অন্যায় আবদার মানি না। তারা বিভিন্ন অর্থ আত্মসাৎ করে আবার তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। তারা  কোথা থেকে হিসাব নিয়ে এসে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। যা মানুষের ব্যয়ের বোঝা ভারী  করবে। অবৈধ গ্যাস বা চুরি ঠেকাচ্ছে না। অবৈধ লাইন দিচ্ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রিপেইড মিটার বসানোর কথা ছিল। মিটার লাগাচ্ছে না। তারা কিছু মিটার লাগানোর পর তা আবার খুলেও নিয়ে গেছে। ভয়ংকর অব্যবস্থাপনা রয়েছে কোম্পানিতে। আমরা তাদের বিচার চাই। তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো মিটারের ব্যবসায় থাকতে চায় কিন্তু আবার মিটার যেহেতু গ্যাস চুরি ঠেকায় সেজন্য এখন তারা নিরুৎসাহিত। সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে বিইআরসি থেকে পরিপত্র জারি হয়েছে এবং বারবার তাগাদাও দেয়া হয়েছে। তারপরও মিটার বসাতে এত দেরি কেন লাগছে- এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য মিটারের চাইতে চুলা প্রতি অর্থ পরিশোধ বেশি লাভজনক। কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে প্রিপেইড মিটার কার্যক্রমে ঢিলেমির এটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন তিনি।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status