দেশ বিদেশ
মধ্যপ্রাচ্যে চীনের প্রত্যাবর্তন নির্ভর করছে ইসরায়েলের ওপর
অনলাইন ডেস্ক
(২ মাস আগে) ২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৪০ অপরাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে গত দুই সপ্তাহের রাজনৈতিক উন্নয়নে দুটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতি পরিবর্তন সেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের মধ্যস্থতায় গত ১০ই মার্চ ইরান ও সৌদি আরব তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাত বছর পর উভয় দেশে দূতাবাস খোলার ব্যাপারে একমত হয়। যদিও তা ইয়েমেনে তিক্ত যুদ্ধের মতো সংঘাতের অবসান ঘটানোর পরিস্থিতি থেকে অনেক দূরে, তবুও একে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ‘দ্য কনভারসেশনে’ এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন সাইমন মাবন।
এছাড়া গত সপ্তাহে ‘দ্য টাইম অব লন্ডন’ পত্রিকায় সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি মাইকেল স্পেন্সার। যদি এই প্রতিবেদন সঠিক হয়, তাহলে এই দুটি পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য;…বিশেষত ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নের কারণে।
নমনীয় আরব
এশিয়া টাইমস লিখেছে, দ্য টাইমস এর প্রতিবেদনের সারমর্ম হল, কিছু আরব রাষ্ট্র দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়। আর সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বিরোধিতা সত্ত্বেও। এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল এবং আরও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি জোরদার করা উচিত।
এর আরেকটি মানে দাঁড়াবে আরব লীগে সিরিয়ার ফিরে আসা। আরব বসন্তের প্রতিবাদকারীদের দমনের অভিযোগে এই লীগ থেকে দেশটিকে ২০১২ সালে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এই পদক্ষেপকে সমর্থন যুগিয়েছিল। এখন সৌদি-ইরানের চুক্তিতে এ অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্বিন্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুক্তির ফলে শুধু ইরান ও সৌদি আরব সুবিধাভোগী হবে এমনটি নয়। এর মাধ্যমে চীন ও আঞ্চলিক স্বৈরাচারী কর্তৃপক্ষও সুবিধা পাবে।
সরাসরি না হলেও এতে রাশিয়ারও লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। গত এক দশকে দেশটি সিরিয়ার সঙ্গে যত্নসহকারে সামরিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তারতুসে ছোট পরিসরে নৌ সুবিধা পাচ্ছে। এর ফলে ভূমধ্যসাগরীয় বন্দরের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পারমাণবিক চুক্তি
যদি চীন ও রাশিয়া উভয়ই সম্ভাব্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তন থেকে উপকৃত হয়, তবে এই অঞ্চলের আরেকটি প্রধান দেশ ইসরায়েলের কী হবে? এশিয়া টাইমস লিখেছে, এক্ষেত্রে ইরানের বর্তমানে অকার্যকর পারমাণবিক চুক্তির অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নতুন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু সরকারের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া অনেকটাই নির্ভর করবে।
কয়েক বছর পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতির পর বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ১৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি হয়েছিল। এটি মূলত ইরানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা লাঘবের বিনিময়ে দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সীমিত করতে পারত। এই যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ছিল চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। চুক্তিটি ২০১৫ সালে কার্যকর হয়।
ইরানের প্রতি গভীর সন্দেহভাজন ইসরায়েলি সরকারের শুরু থেকেই এই চুক্তি অপছন্দ ছিল। পরবর্তীকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মাধ্যমে ইসরায়েলের উদ্বেগগুলো আংশিকভাবে প্রশমিত হয়। ২০১৮ সালে ট্রাম্প ওই চুক্তি প্রত্যাহার করে এবং ইরানের প্রতি ওই নিষেধাজ্ঞা আরও শক্তিশালী করে। এরপর থেকে ইরান নিজেকে মুক্ত হিসেবে মনে করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ইরানকে সম্পূর্ণ মুক্ত করার পরিবর্তে এর চারপাশের প্রান্ত ক্ষয় বা ধ্বংস ডেকে এনেছে।
সূত্র: এশিয়া টাইমস