বিনোদন
হলি আর্টিজান হামলা নিয়ে সিনেমা ‘ফারাজ’, মুক্তিতে আপত্তি অবিন্তার মায়ের
স্টাফ রিপোর্টার
(২ বছর আগে) ২০ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১২:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা নিয়ে বলিউডে ‘ফারাজ’ নামে যে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে, তা ভুল গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত বলে দাবি করেছেন সেদিনের ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। ফারাজ’র ট্রেইলার প্রকাশের তিন দিন পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে এই দাবি করেন তিনি। সিনেমাটির নির্মাতারা সেই ঘটনায় নিহত হিসেবে অবিন্তার পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি বলে তিনিঅভিযোগ করেন। ভারতে সিনেমাটির মুক্তি বন্ধ করতে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। ঢাকার শাহজাদপুরে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় যে ২২ জন নিহত হয়েছিলেন, তাদের একজন অবিন্তা। যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অবিন্তা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্বদেশী সহপাঠি ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং তাদের ভারতীয় বন্ধু তারিশি জৈনের সঙ্গে ক্যাফেটিতে গিয়েছিলেন। কমান্ডো অভিযানে রেস্তোরাঁটি জঙ্গিমুক্ত করার পর তাদের লাশ পাওয়া যায়। সেই ঘটনা নিয়ে বলিউডে ‘ফারাজ’ সিনেমা নির্মাণ করেছেন হানসাল মেহতা। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ছবিটি মুক্তি পাবে। অবিন্তার মা রুবা বলেন, যে ঘটনাটিকে বলা হয়েছে যে আমার মেয়ের জন্য একজন মানুষ (ফারাজ) তার জীবন দিয়েছেন, সেই হিরো … নো, দ্যাটস রং। ইটস অ্যা রং স্টেটমেন্ট। এটা হতে পারে না। আমি তা বিশ্বাস করি না। কারণ তার কোনো প্রমাণ নেই। ওখান থেকে কেউ বেঁচে আসেনি। যারা বেঁচে ফিরেছে, তারা এ বিষয়ে কিচ্ছু জানে না, বলতে পারে না। এ বিষয়ে কোন এভিডেন্সও নাই যে এখানে কেউ হিরো হয়েছে। যদি কেউ হিরো হয়ে থাকে, তাহলে সেই ২২টা মানুষ, যারা চলে গেছে, তারা সবাই হিরো। সিনেমা নিয়ে আপত্তির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে তিনি বলেন, আমার কয়েকটা পয়েন্ট ছিল। এক হচ্ছে: অবিন্তা কবির, তারিশি জৈন, ফারাজ হোসেন এই তিনজন বাকি ২২ জনের মতো চলে গেছে। এটাকে নিয়ে কোনো মুভি করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। মুভিটার নাম ‘ফারাজ’, তার মানে হলো অবশ্যই একটা চরিত্রের উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই ক্যারেক্টারের উপর জোর দিতে গিয়ে আমার মেয়ের কথা চলে আসছে। সো আমরা একটা গল্প বানালাম, সেই গল্প বানিয়ে মুভিটা তৈরি করলাম। কিন্তু এই মুভির সাথে যে পরিবারগুলো আছে, তাদের তো অনুমতি নিতে হবে, সেটা তো নেওয়া হল না। রুবা বলেন, আমার কথা হল মুভিটার নাম কেন ‘ফারাজ’ হবে? আর আমাকে কেন প্রিস্ক্রিনিং করতে দেওয়া হল না, যদি আমার মেয়েকে সেখানে নাই রাখা হবে। নিশ্চয়ই রাখা হয়েছে। অবিন্তা হয়েছে আয়েশা, ইভেন আমি আছি মুভিটাতে রাবেয়া নামে। শুধু তাই না আমার মেয়ের ছবিও দেখানো হয়েছে। তাহলে আমার মেয়ের প্রাইভেসি কোথায় থাকল? আমার প্রাইভেসি কোথায় থাকল? তিনি আরও বলেন, আমি ঘটনাটা জানি ২০১৯ সালে। তখন থেকে চেষ্টা করেছি উকিল নোটিস দিয়ে বিভিন্নভাবে এটিকে থামানোর জন্য। তারপর মহামারী যখন শুরু হল পুরো দুনিয়া অন্য রকম হয়ে যায়। তখন আমার ধারণা হয়েছিল হয়ত মুভিটা বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট আমি প্রথম পোস্টারটা পাই। পোস্টারটা পাওয়ার পর মুভির নামটা জেনেছি। তখন বুঝলাম আসলে মুভিটা বন্ধ হয়নি। তখন থেকেই আজকের দিন পর্যন্ত আমি ডেইলি হাই কোর্টে (দিল্লির আদালত) খোঁজ নিই। এখন পর্যন্ত আমার মামলা চলছে। আমি শুধু ছয় মাস মুভিটাকে আটকে রাখতে পেরেছিলাম। কারণ আইনের ভাষায় পাবলিক ডোমেইনে থাকলে আমার না কি কিছু করার নেই। দরকার হলে আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব। ভারতে নির্মিত এই সিনেমাটি বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।