বরগুনায় ডেঙ্গুতে উপজেলা পরিষদ কর্মকর্তার মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চিফ এসিস্ট্যান্ট (সিএ) সিরাজুম মুনিরা (৩৩) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রধান সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। নতুন দু’জনসহ এ নিয়ে বরগুনায় ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত মোট ২৫ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ভাণ্ডারিয়া এলাকায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সিরাজুম মুনিরা পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা গ্রামের মোহাম্মদ মোজাম্মেল কাজীর মেয়ে এবং সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের মনির মিয়ার স্ত্রী। তাদের ১০ বছরের একটি ছেলে ও ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। জানা যায়, তিনদিন আগে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরে তাকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে তার প্লাটিলেট আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় শনিবার সকালে বরিশালে রেফার করা হয়। পরে বরিশালে নেয়ার পথেই মৃত্যু হয় তার। এর আগে শুক্রবার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার আবদুল করিম (৫০) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ৫৭ জন, আমতলীতে ৫, পাথরঘাটায় ২, তালতলীতে ৩ এবং বেতাগীতে ১ জন। বর্তমানে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৩৪ জন। এরমধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ১৮৫, আমতলীতে ৮, তালতলীতে ১১, পাথরঘাটায় ৭, বামনায় ১৭ এবং বেতাগীতে ৬ জন চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পাথরঘাটাতেই মারা গেছেন দুই জন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকায় অনেকে মেঝে, করিডোর ও সিঁড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত ওষুধ ও শয্যার সংকট রয়েছে। মশার বিস্তার ও পৌরসভার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জেলার প্রত্যেকটি পৌরসভাসহ গ্রামপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মশা নিধন ওষুধ জরুরিভাবে ছিটানো দরকার।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক অফিসার ডা. অপূর্ব বিশ্বাস রাখাল বলেন, শুক্রবার পরীক্ষায় তার ৪৫ হাজার প্লাটিলেট পাওয়া যায়। ওই সময় তার শারীরিক অবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু স্বজনরা তাকে নিয়ে যাননি। পরে আবারো তার পরীক্ষা করালে ৩৯ হাজার প্লাটিলেট পাওয়া যায়। এরপর সকালে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় তার। এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, একজন রোগী শুধু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েই মারা যান না। যেসব রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তাদের আরও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তখন অন্য রোগগুলোও তাদের আক্রমণ করে। যার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পর দুর্বল হয়ে মারা যায়।