দেশ বিদেশ
চালের দাম কেনো বাড়ছে?
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
দু’সপ্তাহ থেকে বেড়েছে সবধরনের সবজির দাম। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দামও। ঈদুল আজহার পর গত তিন সপ্তাহ ধরেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। অধিকাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষে সরবরাহ করা হয়েছে মিলে। এরই মধ্যে নতুন চাল ঢুকছে বাজারে। এরপরও ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। বিশেষ করে আটাশ, নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম চড়া। কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। আটাশ ও নাজিরশাইল চালেও বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা করে। শুক্রবার সরজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার, মগবাজার, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ি এলাকার বাজারগুলো ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও দোকানভেদে খুচরা মূল্যে কেজিপ্রতি আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে হাসকি নাজির-৬৫-৬০ টাকা, কাটারি নাজির ৮৮-৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা চাল কেজি ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে। মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, জিরাশাইল ৭৪ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৬ টাকা দরে।
অন্যদিকে, এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বৃহস্পতিবারের বাজার দরে দেখা যায়, সরু নাজির চাল ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। যা গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে, মোটা স্বর্ণা চালের বৃহস্পতিবার দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, যা গত মাসে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে চালের দাম হুট করেই ৬-৮ টাকা বেড়ে যাওয়ায় তারা নিজেরাও বিপাকে পড়ে গেছেন। ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারাও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন মোকামের মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। চালের বাজারে কাজ করছে সিন্ডিকেট। ওদিকে ঈদের পর থেকে কিছুটা স্বস্তিদায়ক মুরগি ও ডিমের দাম। তবে কিছুটা বেড়েছে সবজির বাজার। সহনীয় দামে কেনা যাচ্ছে পিয়াজ আলুসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে, যা ঈদের আগের তুলনায় ২০ টাকা কম। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। আর ডিমের ডজন ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি টমেটো ১২০-১৬০ টাকা, বরবটি, কাকরোল ও কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। পেঁপে, পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর ঝিঙা, চিচিঙা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া আলু ২৫-৩০, পিয়াজ ৫০-৫৫ এবং পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শনির আখড়া বাজারের চাল বিক্রেতা তারেক হোসেন বলেন, সব মোকামেই চালের দাম বেড়েছে। মে মাস থেকে বোরো মৌসুমে চাল বাজারজাতকরণের পরও হঠাৎ করে চালের দাম বেড়েছে। এখন তো দাম বাড়ার কথা না। ধানের ফলন ভালো হয়েছে এবার, মিল মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট। তাদেরকে ধরলে দাম আগের মতো কমে যাবে। কাওরান বাজারের আল্লার দান স্টোরের আউয়াল তালুকদার বলেন, ঈদের আগে মিনিকেটের দাম কম ছিল। বস্তায় এখন ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। কেজিতে ৬-৭ টাকা বেড়েছে। আটাশ ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। নাজির ২৫ কেজি বস্তায় ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। এত দাম বাড়ার কারণ বলা যাচ্ছে না। ঈদের পর এ সময়টাতে ২-১ টাকা বাড়ার কথা। কিন্তু ৬-৮ টাকা বাড়ার কথা না। মগবাজার মালেক স্টোরের বিক্রেতা বলেন, চালের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদের আগে যে সকল চাল কমে বিক্রি করেছি সেসব চালের কিছু কিছু এখন ১-৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোনো চালে ২০-২৫ টাকা, কোনো চালে ১০০-১৫০ টাকা করে বস্তাপ্রতি বেড়ে গেছে।