ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন

এ রকম আহ্বানের অপেক্ষায় থাকেন বিয়ানীবাজারের তরুণরা

বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের আইনজীবী চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করেন আহমদ শাওন (২২)। ২০২০ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত এক তরুণীকে প্রথম রক্ত দেন তিনি। সেই থেকে রক্তদানের আগ্রহ তৈরি হয় তার। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি হয়ে উঠেছেন নিয়মিত রক্তদাতা। এ পর্যন্ত মোট ৯ বার রক্ত দিয়েছেন শাওন। সর্বশেষ মাসখানেক আগে এক প্রসূতিকে রক্ত দেন তিনি। বিয়ানীবাজারে বর্তমানে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার প্রবণতা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে এখন দ্রুত রক্তদাতা মিলে যাচ্ছে। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টায় রক্তদানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন রক্তদাতা। স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। স্বেচ্ছায় রক্তদাতা আব্দুল করিম (২৫) বলেন, ‘রক্তের জন্য ফোন এলে কখনো না করি না। একবার রক্ত দেয়ার পর তিন-সাড়ে তিন মাস হয়ে গেলে রক্ত দেয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকে। একবার দেয়ার পর কখনো মনে হয় না এবার একটু সময় নেবো বা এবারটা দেবো না। কারণ, মানুষ বিপদে পড়েই রক্ত চায়।’ বিয়ানীবাজারে নিয়মিত রক্ত দেন- এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় এখানে স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ ছিল। মানুষরা সচেতন ছিলেন না। এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছে। আগ্রহ বাড়ছে। প্রয়োজনে রক্ত পাওয়া যায়। কেউ রক্তের প্রয়োজনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলে সবাই মিলে সেটার ব্যবস্থা করে দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই কাজটি সহজ করে দিয়েছে। বিয়ানীবাজারে রক্তদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত কোনো সংগঠন নেই। তবে নীরবে কাজ করছে বিয়ানীবাজার ব্লাড গ্রুপ, বিয়ানীবাজার ব্লাড ফাইটার, সহায়তা ব্লাড গ্রুপ, মানবিক রক্তদান ফাউন্ডেশন, সিএমএস ব্লাড ডোনেশন ক্লাবসহ আরও অন্তত চারটি সংগঠন। তাদের সদস্য সংখ্যা ৩শ’র উপরে। প্রতিদিন সদস্য সংখ্যা বাড়ছে।

উপজেলায় রক্তের চাহিদার অর্ধেকের বেশি আসে এ সকল স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে। স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকার কিছু উদ্যমী তরুণ গড়ে তুলেছেন অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। ‘একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন’- এ রকম কোনো আহ্বানের অপেক্ষায় থাকেন সংগঠনের সদস্যরা। আর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছুটে বেড়ান তাদের জীবন বাঁচাতে। পৌঁছে যান হাসপাতালে। হাসিমুখে ফেরেন রক্ত দিয়ে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান বলেন, ৯০ শতাংশের বেশি রোগী যেকোনোভাবে রক্তদাতা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। রক্তের চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে। রক্তদাতা সায়মন আহমদ বলেন, এখন রক্তদানে তরুণরা বেশ আগ্রহী। করোনার সময় থেকেই অনেক এলাকায় রক্তদাতা সংগঠন কার্যক্রম শুরু করেছে। রক্তদাতা মাহিন আহমদ বলেন, ‘সময় যতই সংকটময় হোক না কেন, কারও পাশে দাঁড়াতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আর স্বেচ্ছাসেবাই তো মানুষকে সমৃদ্ধ করে।’ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, যান্ত্রিক জীবনে সবাই যখন প্রতিযোগিতার দৌড়ে ব্যস্ত, তখন একদল তরুণ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন মানুষের জন্য। এটাই মানবিকতা।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status