দেশ বিদেশ
নদীভাঙনে ভূমিহীন দু’শতাধিক পরিবার
শাহজাদপুরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে মানববন্ধন
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৫, রবিবারসিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিলে প্রমত্তা যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত দুইশ’ পরিবারের ভিটেমাটি। এরপর থেকেই বাস্তুহারা আশ্রয়হীন মানুষরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। সরকারি বাঁধের কিনারে, অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বা কোনো পতিত জায়গায় ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনোরকম পলিথিন ও টিনের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবার। বাস্তুহারা এসব মানুষের দাবি, পায়ের তলায় একটু মাটি আর মাথার উপরে একটি চাল। যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনমজুরি করে সংসারটা চালাতে পারেন। কোনো ত্রাণ বা সাহায্য চান না তারা। তাই স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ভিটেমাটিহারা সম্বলহীন দুই শতাধিক পরিবার। এদিকে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের দাবিতে উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর শনিবার মানববন্ধন করেছে যমুনায় ভিটেমাটিহারা দুই শতাধিক পরিবারের নারীপুরুষ। এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন যমুনার ভাঙনে বাস্তুহারা আশ্রয়হীন বিধবা মাজেদা খাতুন, জীবন বেওয়া, আজিদা বেগম, মানিক ব্যাপারি, লেদু শেখ প্রমুখ। এ সময় বিধবা মাজেদা খাতুন জানান, অল্প বয়সেই স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। এরপর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ভাগ্য বিড়ম্বনায় এই সামান্য সুখও যেন সহ্য করেনি প্রকৃতি। নির্দয় যমুনার করাল গ্রাসে চলে গেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। এখন তিনি অন্যের জায়গায় পলিথিন ও টিনের কোনোরকম ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সম্বলহারা এই বিধবা জীবন সায়াহ্ণে এসে স্থায়ীভাবে আশ্রয় পেতে চান। বাস্তুহারা আজিদা বেগম, মানিক ব্যাপারি, লেদু শেখ বলেন, রাক্ষুসী যমুনা সব কাইরা নিছে। অন্যের জায়গা ভাড়া নিয়া কোনোরকম আশ্রয় নিলেও সেখানেও ঠিকমতো টাকা না দিতে পারায় জায়গার মালিকরা তাড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন সরকারের কাছে চাওয়া, সহায় সম্বলহীন মানুষদের জন্য মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই। এ ব্যাপারে হাটপাচিল এলাকার সমাজকর্মী ইয়াসিন কবির চতুর জানান, আশ্রয়হীন এই মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য ঘুরেছেন সরকারি বিভিন্ন অফিসের দ্বারে দ্বারে, বিভিন্ন সংস্থার কাছে। কেউই এই অসহায় মানুষদের নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দেয়নি। বরং কোনো কোনো সংস্থা উপহাস করে বলেছেন, আগে ভাইরাল হন তারপরে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, যমুনা ভাঙনে ঘরবাড়ি হারা বাস্তুহীন মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।