ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

হাইকোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
mzamin

 মহামান্য হাইকোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি। একের পর এক মামলা পুনঃমামলা ও তদবিরে আটকে গেছে অভিযান। মামলার বাদিনী ওয়াক্‌ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি প্রভাবশালী দখলদারদের অপকৌশল ও হয়রানিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। জানা যায়, উপজেলা শহরের পারিয়া মৌজার সিএস খতিয়ান ২৪ ও ২৫ এবং ৬, ৬২ ও ৬৬ নং দাগের ৫.৭১ একর সম্পত্তি স্থানীয় পানিয়া মোহাম্মদ এস্টেটের সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত। এই সম্পত্তি গত ২৫শে জানুয়ারি ২০১২ সালে ১৭২/১২ নং রিট মামলার সূত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের এডিসি (রাজস্ব) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি মোছা. মাসুদা আকতারের কাছে বুঝে দেয়া হয়। প্রভাবশালী দখলদাররা কয়েকমাস পরেই ৪ঠা নভেম্বর ১২ উচ্ছেদ সম্পত্তি পুনরায় দখল করে নেন। শুরু হয় মামলা পুনঃমামলা। মোতাওয়াল্লি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে কোর্ট শুনানি অন্তে ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সালে মোতাওয়াল্লির কাছে সম্পত্তি বুঝে দেয়ার জন্য আদেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে দখলদাররা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল নং ১৫০৮/১৮ দায়ের করলে শুনানি অন্তে আপিলটি ৩রা মার্চ ১৯ সালে খারিজ হয়। এদিকে অবৈধ দখলদাররা জেলার যুগ্ম জজ আদালত-১ এ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে দেওয়ানী আদালতে ৪৯/১১ নং মামলা দাযের করেন। আদালত ২৫শে মার্চ ১৫ সালে মামলাটি খারিজ করেন। দখলদাররা রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী আপিল ৮৪/১৫ দায়ের করলে জেলা জজ শুনানি অন্তে আপিলটি ১৯.০৮.১৮ ইং নামঞ্জুর করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৩৯৩৫/১৮ দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একক বেঞ্চ মামলাটি শুনানি অন্তে ২০ সালের ৬ই অক্টোবর খারিজ করেন। অতঃপর বিবাদীরা উক্ত সম্পত্তির ওপর হাইকোর্ট থেকে স্থিতাবস্থার আদেশ করিয়ে নেন। মোতাওয়াল্লি স্থিতাবস্থার আদেশ ভ্যাকেট এর আবেদন করলে আপিল বিভাগের ফুল কোর্ট ২২ সালের ১০ই মার্চ আদেশটি রিকলড ভ্যাকেট করেন এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উক্ত সম্পত্তি উদ্ধার পূর্বক বুঝে দেয়ার জন্য আদেশ দেন। সমস্ত বাধা দূর হলেও নানা অজুহাত ও তদবিরের কারণে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের লক্ষণীয় কোনো উদ্যোগ নেই। ২৪ সালের অক্টোবরে জেলা ভূ-সম্পত্তি জবরদখল বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ এবং তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং সংক্রান্ত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. সোলেমান আলী, পীরগঞ্জ ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে ২৪ সালের ২০শে নভেম্বর নির্দেশ দেন। প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড সংশ্লিষ্ট দখলদারদের নোটিশ প্রদান করেন এবং স্থাপনাসমূহ ৪ঠা ডিসেম্বর ২৪ এর মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য নোটিশ করেন এবং ২৫ সালের ৬ই জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে মর্মে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্সসহ যাবতীয় কার্যক্রম প্রস্তুত করেন। অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৫ সালের ১৮ই মে বিবাদীদের পক্ষে নবাব সেলিম হাইকোর্টে চলমান অজুহাতে ১৭৯৮/২১ মামলার সূত্রে অভিযান বন্ধ রাখার আবেদন করেন। হাইকোর্টে মীমাংসিত বিষয় নিয়ে ইউএনও বরাবরে আবেদন করে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক এবং ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এদিকে জেলা মনিটরিং কমিটি ২৫ সালের মে মাসের মাসিক সভায় ওয়াক্‌ফ কেন্দ্রীয় প্রশাসন হতে পুনরায় উচ্ছেদের বিষয়ে পত্রের বরাতে সংশ্লিষ্ট ৫.৭১ একর সম্পত্তি উচ্ছেদের জন্য পুনরায় উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ২৫শে মে পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপরেও উচ্ছেদের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও এবং এসিল্যান্ড ১৪ই জুন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এভাবেই ৭ বছর ধরে ঝুলে আছে হাইকোর্টের আদেশ। যেখানে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাপূর্বক ওয়াক্‌ফ এস্টেটের ৫.৭১ একর সম্পত্তি মোতাওয়াল্লির কাছে বুঝে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। হাইকোর্টের সে নির্দেশনা নানা খোড়া অজুহাতে ৭ বছরেও কার্যকর না হওয়ায় জনমনে আইনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার আদেশপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সব ঠিক আছে তবু আইনগত কারণেই অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ বিশিষ্ট আইনজীবী মো. বেলাল হোসেন বলেছেন, এটা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। কারণ ১৭৯৮/২১ মামলায় ফুলকোর্ট বসে স্ট্যাটাসকো আদেশ প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে ঐ সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কোনো আইনগত বাধা নেই বরং এই যে, উচ্ছেদ কার্যে প্রশাসনের অবহেলা বা অপারগতা এর জন্য আদালত অবমামনার মামলা হতে পারে। বিষয়টি এলাকার জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status