ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি

বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিবকে শেষ বিদায় জানালো পোশাক খাতের সহকর্মীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ দিন আগে) ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৮:০৭ অপরাহ্ন

mzamin

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিবের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন পোশাক খাতের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। সহকর্মীরা বলেন, আবদুল্লাহ হিল রাকিব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন। তারা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে জানান।
শনিবার রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে আবদুল্লাহ হিল রাকিবের নামাজে জানাজায় এসব কথা বলেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা। সকাল ১০টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৯ই জুন বিকালে কানাডার একটি লেকে নৌকা দুর্ঘটনায় মারা যান টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব। তার মরদেহ বিমানের একটি ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় পৌঁছায়। সকালে বিজিএমইএ কার্যালয়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুল মানুষের উপস্থিতির কারণে সেখানে দ্বিতীয় জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান স্মৃতিচারণ করে বলেন, “রাকিব ভাইয়ের সঙ্গে অনেক বছর কাজ করেছি। তাকে দেখেছি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও সংগঠন-সবকিছুকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে। খাতের যেকোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাকিব ভাই বলতেন, সফলতার কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। তবে কারও জানাজায় মানুষের উপস্থিতি দেখে কিছুটা বোঝা যায়, তিনি কতটা সফল ছিলেন। আজকের জানাজায় তার সেই কথার প্রতিফলন ঘটেছে।
গত মাসে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আবদুল্লাহ হিল রাকিব। তার জানাজায় উপস্থিত হয়ে সম্মিলিত পরিষদের নেতা ও চৈতি গ্রুপের এমডি মো. আবুল কালাম বলেন, রাকিব ভাইয়ের দেখা স্বপ্ন-বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা-বাস্তবায়নে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস. এম. ফজলুল হক বলেন, রাকিব ছিলেন উজ্জ্বল প্রদীপ, যিনি অনেক স্বপ্ন দেখতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই প্রদীপ ঝড়ো হাওয়ায় নিভে গেল। আমরা তার জন্য দোয়া করি।
আরেক সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, আবদুল্লাহ হিল রাকিব লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। আমরা তার দেখানো পথে এগিয়ে যাব।
বিজিএমইএর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তার মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর বেদনার। তিনি ছিলেন একজন জাতীয় পর্যায়ের সফল উদ্যোক্তা। তিনি সব সময় পোশাক রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
জানাজার শুরুতে উর্মি গ্রুপের এমডি আসিফ আশরাফ বলেন, রাকিব ভাই ছিলেন এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি শুধু নিজের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং পুরো শিল্প ও দেশের কল্যাণ নিয়ে চিন্তা করতেন। পোশাক শিল্পে দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন ও ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’-এর অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী প্যানেল ফোরামের নেতা ও রাইজিং ফ্যাশনের এমডি মাহমুদ হাসান খান সবাইকে রাকিব ভাইয়ের জন্য দোয়ার অনুরোধ জানান। স্মৃতিচারণ করেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
আবদুল্লাহ হিল রাকিবের কন্যা লামিয়া তাবাসসুম বলেন, আমার বাবা স্বপ্ন দেখতেন এবং অন্যদের স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি যে স্বপ্নগুলো আমাদের দিয়ে গেছেন, সেগুলো যেন আমরা সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আবদুল্লাহ হিল রাকিব। বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি ছয় বছর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরে ১৯৯৯ সালে মুনাফাভিত্তিক অংশীদারত্বে একটি বায়িং হাউস স্থাপন করেন। এরপর পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন। ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি একে একে চারটি রুগ্ণ পোশাক কারখানা কিনে সেগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন। এর মধ্যে দুটি পরিবেশবান্ধব কারখানা। তিনি হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। দেশের বাজারে ‘টুয়েলভ’ নামে একটি পোশাক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার সহধর্মিণী আফরোজা শাহীন এবং তাদের দুই সন্তান—মাহির দাইয়ান ও লামিয়া তাবাসসুম। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে কানাডার টরন্টোয় বসবাস করছেন। রাকিব ছুটিতে ঢাকা থেকে কানাডায় যেতেন। গত ৫ জুন ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে কানাডায় যান তিনি। সেখানেই নৌকা দুর্ঘটনায় নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় মারা যান বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান—রাকিবের বন্ধু।
কানাডার টরন্টোর ড্যানফোর্থে সুন্নাতে জামাত মসজিদে গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশে আনার পর আজ সকালে উত্তরা বিজিএমইএ ভবনে প্রথম জানাজা এবং বাদ জোহর বনানী ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিমান বাহিনী শাহীন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status