ঢাকা, ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং: এমসিসিআই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:৪৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং । তবে বাজেটকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, করব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা প্রদানের আরো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে মেট্রপলিট্যান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। এমসিসিআই এর ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ৫৪তম জাতীয় বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করার জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে অভিনন্দন জানায় এমসিসিআই। জুলাই গণ-অভ্যূত্থান পরবর্তী দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বাজেট মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা কর্তৃক পেশকৃত প্রথম বাজেট।

এমসিসিআই মনে করে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে রপ্তানি বাজার সংকুচিত হওয়া; মন্থর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধাবস্থা এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণের সময় বাজেট প্রস্তুতকরণ অর্থ উপদেষ্টার জন্য একটি দুঃসাহসিক কাজ ছিল।

প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমসিসিআই জানায়, প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট ৭৯০,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ১২.৭%), যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭৯৭,০০০ কোটি টাকা) চেয়ে শতকরা প্রায় ০.৮৮ শতাংশ কম, সংশোধিত বাজেটের (৭৪৪,০০০ কোটি টাকা) চেয়ে ৬.১৮ শতাংশ বেশী। অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে অন্তর্বতীকালীন সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২৩০,০০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬৪,০০০ কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার (৫১৮,০০০ কোটি টাকা) চেয়ে ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। এই ৫৬৪,০০০ কোটি টাকার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৪৯৯,০০০ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ৬৫,০০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে রাজস্ব বহির্ভুত খাত থেকে।

এমসিসিআই জানায়, আমরা সবসময় কর প্রশাসনে অর্থবহ কাঠামোগত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে আসছে, যেন কর প্রশাসন যথাযথভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। কর হার বৃদ্ধির মাধ্যমে নিয়মিত কর প্রদানকারী ব্যক্তি/ব্যবসায়ীদের উপর আরো বেশি করের বোঝা চাপানোর চেষ্টা; বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধা করার জন্য এমসিসিআই জোর দাবী জানাচ্ছে। এই ব্যবস্থা সমাধানের জন্য করনেট বৃদ্ধি করা অতীব জরুরী।

বাজেটে ঘাটতি প্রসঙ্গে এই চেম্বার জানায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২২৬,০০০ কোটি টাকা (যা জিডিপির ৩.৬২%)। মোট ঘাটতির মধ্যে ১০১,০০০ কোটি টাকা বাইরের উৎস থেকে এবং ১২৫,০০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংস্থান করা হবে। এই ১২৫,০০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০৪,০০০ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে, এবং ২১,০০০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।

এমসিসআই জানায়, বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে এমসিসিআই চিন্তিত। বিনিয়োগ বিগত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২৯.৩৮%), সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে। বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থান কমে গেছে, বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। বিনিয়োগ পরিবেশের অবনতি অর্থনীতির সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুপারিশকৃত করব্যবস্থার চলমান সংস্কারের শর্তাবলীর কারণে চূড়ান্ত বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পেতে পারে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সুতরাং, এমসিসিআই সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার জন্য যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ১০৪,০০০ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট (৯৯,০০০ কোটি টাকা) থেকে ৫.০৫ শতাংশ বেশি। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দুই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে; প্রথমত, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে একটি crowding out প্রভাব তৈরি করতে পারে, যার ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে,  যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা বা জনগণকে। তাই এমসিসিআই এই দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। এছাড়াও, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠনের জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন বলে এমসিসিআই মনে করে।

চেম্বার মনে করে যে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে গরীবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উপর অধিকতর নজর দেওয়া উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১১৬,৭৩১ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৬,০২৬ কোটি টাকা ছিল, এই খাতে ১৯,২৯৫ কোটি টাকা বা ১৪.১৯ শতাংশ কমানো হয়েছে। এমসিসিআই এই খাতের বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন মনে করছে।

এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো, জ্বালানীর অসম বণ্টনব্যবস্থা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এখনো প্রধান অন্তরায় হিসেবেই চিহ্নিত। এছাড়াও, দুর্বল রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা (বর্তমান অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলের মধ্যে ৬২.৪১ শতাংশ সংগৃহীত) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন (বর্তমান অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ৪১.৩১ শতাংশ বাস্তবায়িত) অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ আমদানি প্রবণতা ও বর্তমান বৈশ্বিক বিপর্যয় অবস্থা বিবেচনা করে আমাদেরকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে বলে এমসিসিআই মনে করে।

লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে বর্তমান বাজেটে টার্নওভার কর ০.৬০% থেকে ১% এবং খাত বিশেষে ৩% পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং কার্যকরী করহার কমানোর কোনোরূপ পদক্ষেপ না থাকায় এমসিসিআই হতাশা ব্যক্ত করছে। এমসিসিআই সবসময় বলে আসছে যে, প্রতিষ্ঠানের টার্নওভারের উপর ন্যূনতম কর (মিনিমাম ট্যাক্স) করনীতির পরিপন্থী। তাই এটি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায় লাভ হলে শুধুমাত্র করযোগ্য আয়ের উপর কর প্রযোজ্য হবে এবং রাজস্ব বা অন্যকোনো তহবিলের উপর প্রযোজ্য হবে না।

Publicly traded কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের ১০% এর অধিক শেয়ার IPO (Initial Public Offering) এর মাধ্যমে হাস্তান্তর হলে আয়করের হার ২২.৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র IPO এর মাধ্যমে হস্তান্তরের বিষয়টি উল্লেখ আছে। এমসিসিআই মনে করে, এক্ষেত্রে IPO এর পরিবর্তে PO (Public Offering) এর মাধ্যমে হস্তান্তরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তিযুক্ত।Stock market education

পারকুইজিট বাবদ কোনো কর্মচারীকে প্রদত্ত অংশ ১০ (দশ) লক্ষ টাকা থেকে ২০ (বিশ) লক্ষ টাকায় বৃদ্ধি করায়; কোম্পানীসমূহের কর ব্যয় কিছুটা কম হবে। তবে “পারকুইজিট” এর কোনরূপ সীমার আবশ্যকতা থাকা উচিত নয় বলে এমসিসিআই মনে করে।

উৎসে করের রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে পূর্বে প্রতিমাসে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল, যা বর্তমান অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর প্রস্তাবনায়, প্রতি ত্রৈমাসিক অন্তর অন্তর দাখিলের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোম্পানীসমূহের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৫৫(ঙ) অনুযায়ী কোম্পানিসমূহ ব্যবসায়ীক টার্নওভারের ৬% অথবা নিট ব্যবসায়ীক মুনাফার ১৫%, যা কম হবে; এই পরিমাণ অর্থ রয়্যালটি, লাইসেন্স ফি, করিগরি সেবা ফি, ইত্যাদি বাবদ ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে। BIDA এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শুধুমাত্র টার্নওভারের ৬% থাকলে কোম্পানিসমূহের প্রকৃত ব্যয় নির্বাহ করতে পারতো, এমন বিধান প্রবর্তন করা যেতে পারে মর্মে এমসিসিআই মনে করে।

বর্তমানে ১ কোটি ১৪ লাখ ইটিআইএন ধারীদের মধ্যে শুধুমাত্র ৪৫ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য কর রিটার্ন জমা দেন। অন্যদিকে মোট রাজস্ব আহরণের ৮৪ শতাংশ শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেই আসে। সুতরাং, সুষ্ঠু কর ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক করনীতিমালার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের আওতা বৃদ্ধি করার জন্য এমসিসিআই জোর দাবী জানাচ্ছে। এছাড়াও প্রান্তিক করদাতাদের নূন্যতম কর ৩০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০০০ টাকা উন্নীত করায় প্রান্তিক করদাতাদের উপর করের বোঝা বাড়বে। কর আহরণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিবেচনামূলক ক্ষমতা (discretionary power) হ্রাস করা প্রয়োজন বলে এমসিসিআই মনে করে।

বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২০২৬-২০২৭ এবং ২০২৭-২০২৮ করবর্ষের জন্য ৩৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করাকে এমসিসিআই স্বাগত জানাচ্ছে। তবে কর ধাপ ও কর হারের পরিবর্তনের ফলে সকল স্তরের করদাতাদের করের বোঝা বাড়বে। এই সীমা ৪৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা গেলে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী উপকৃত হত।

কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিসহ করনেট সম্প্রসারণ সরকারের জন্য একটি কঠিন কাজ। উল্লেখ্য যে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিডিপি ৬,২৪৪,৫৭৮ কোটি টাকার আকারের মধ্যে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৫৬৪,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। করব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এবং জনবান্ধব করনীতি তথা করব্যবস্থার সরলীকরণের উপর উচ্চমাত্রায় রাজস্ব আহরণ নির্ভর করে বলে এমসিসিআই মনে করে।

ভ্যাট আইনের কাঠামোগত সংস্কারের জন্য (মূল ভ্যাট আইন, ২০১২-তে অন্তর্ভুক্তি) কোনো উল্লেখযোগ্য পরামর্শ না থাকায় এমসিসিআই হতাশা প্রকাশ করছে।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানীতে আগাম কর (AT) বর্তমানে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাবকে এমসিসিআই স্বাগত জানাচ্ছে। তবে এই আগাম কর (AT) অনেকাংশে বিধি-বিধানের কারণে ফেরতযোগ্য অথবা ভ্যাট বহির সাথে অ-সমন্বয় যোগ্য হিসেবে থেকে যায়। এমতাবস্থায়, শিল্পের কাঁচামাল আমদানীর ক্ষেত্রে এই আগাম কর হার শূন্য (zero) হওয়া আবশ্যক।

আগাম কর সমন্বয় অথবা উৎসে কর কর্তন বা চালানপত্র অথবা বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ভ্যাটের হ্রাসকারী সমন্বয়ের ক্ষেত্রে পূর্বের “চার (৪) করমেয়াদ” থেকে “ছয় (৬) করমেয়াদ” পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাবকে এমসিসিআই স্বাগত জানাচ্ছে।

এমসিসিআই বিশ্বাস করে, ভ্যাটের জন্য ই-ইনভয়েসিং পদ্ধতি এবং ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করলে সামগ্রিক ভ্যাট সংগ্রহ প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত হবে। বর্তমান বাস্তবতায় ভ্যাটের নেট বৃদ্ধি করে সকল যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে চেম্বার মনে করে।

চেম্বার আরও বিশ্বাস করে যে, কার্যকর অটোমেশন, ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস) ও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)-এর মধ্যে ইন্টারফেসসহ, ভ্যাট সিস্টেমকে কার্যকর করে তুলবে। এটি অধিক ভ্যাট সংগ্রহ নিশ্চিত করতে এবং আরো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, এমসিসিআই জোরালোভাবে প্রস্তাব করছে : ১) ইনপুট-আউটপুট সহগ বাদ দেওয়া, ২) ইনপুটের উপর রেয়াতের সীমাবদ্ধতা সহজ করা, এবং ৩) উৎসে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ হ্রাস করা। এছাড়াও ক্যাশলেস সোসাইটি (কাগুজে নোটবিহীন লেনদেন) এবং ক্যাশলেস ট্যাক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে করদাতাদের হয়রানী বন্ধ হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।

পর্যায়ক্রমিক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন সাপেক্ষে বাজেটের বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রেক্ষিতে বাজেট বাস্তবায়নের মূল্যায়ন আবশ্যক। এমসিসিআই মনে করে যে, প্রতি তিন (৩) মাস অন্তর বাজেটের একটি অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন হওয়া দরকার, প্রয়োজনে এটি পুনর্গঠন এবং সেই অনুযায়ী সংশোধন করা যেতে পারে। সমাজ ও অর্থনীতিতে যে সব সমস্যার প্রভাব রয়েছে, সে সব উদ্ভুত সমস্যা মোকাবেলা করার প্রয়োজন হতে পারে।

এমসিসিআই বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে সহায়তা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা, ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে। এমসিসিআই আশা করে, এই বাজেট অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এমসিসিআই দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বরাবরের মতোই তার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status