দেশ বিদেশ
৪ বছরেও চালু হয়নি ১৫ কোটি টাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
১৯৬৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্নে নির্মিত সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের নানাবিধ সমস্যা ও জনবল সংকটের কারণে সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্য সেবাদান বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণ করে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের দাবি ছিল উপজেলাবাসীর। স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবশেষে সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নতুন ভবনে কার্যত্রম শুরু না হওয়ায় রোগীদের বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ পুরনো ভবনের ওয়ার্ডে বা ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এদিকে, উপজেলা পর্যায়ে সর্বপ্রথম ৭তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মিত হয়েছে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়। এই ভবনটি নির্মাণের মধ্যদিয়ে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতের ঘোষণা দেয়া হয়। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা- নতুন ভবনে জনবল বৃদ্ধি ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি চালু করা হবে। হাসপাতালের বন্ধ থাকা প্রতিটি বিভাগ চালু করা হলে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। সহজেই উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পাবেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। কিন্তু ৭তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ভবনটিতে কার্যক্রম চালু করার অনুমতি না পাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ২০শে মার্চ কার্যাদেশ অনুমোদন করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি)। ওই বছরের ৩রা এপ্রিল ভবনের পাইলিংয়ের কাজ শুরুর পর ৫ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার চার বা সাড়ে চার বছরেও ৭তলা এ ভবনটিতে স্বাস্থ্যসেবাদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। ভবনটির প্রথম তলায় আউটডোর, দ্বিতীয় তলায় কনসালটেন্ট, তৃতীয় তলায় প্রশাসনিক অফিস, চতুর্থ তলায় স্টোর ও পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ, পঞ্চম-ষষ্ঠ তলায় অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও সপ্তম তলায় নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লিফট ছাড়া নতুন ভবনে উঠানামা করা সম্ভব নয়। একটি লিফট চালু করার পর হঠাৎ করে সেটি বিকল হয়ে গেছে। ভবনের সামনে রাখা হয়নি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। স্থানীয় উপকারভোগীরা বলছেন, হাসপাতাল ভবনের নানা সমস্যা, জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে আমরা এতদিন কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। সামান্য অসুখ-বিসুখে সিলেট শহরে দৌড়াতে হয়েছে। নবনির্মিত ৭তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে সেটি অবশ্যই আনন্দের বিষয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষ চাহিদামতো স্বাস্থ্যসেবা পাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ বিলম্বে নতুন ভবন চালুর অনুমতি না পাওয়ায় আমরা সেবাবঞ্চিত হয়ে খুবই হতাশ হচ্ছি। বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হ্যাপি দাস বলেন, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে অনেক কষ্ট করে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে। জনবল সংকট তো আছেই। নবনির্মিত ভবনটি দেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম ৭তলা বিশিষ্ট ভবন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এখন শুধু অনুমতির জন্য অপেক্ষা।এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, জনবল সংকটের কারণে ৭তলা ভবনে পুরোদমে কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।