দেশ বিদেশ
কলাপাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
পটুয়াখালীর দুর্যোগপ্রবণ কলাপাড়া উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। উপজেলায় ৩৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ২/৩ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকায় যথাযথ সেবা না পেয়ে দিন দিন সরকারি হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এতে বিত্তবানরা চিকিৎসাসেবা পেতে পটুয়াখালী জেলা সদর, বরিশাল বিভাগীয় শহর ও রাজধানী ঢাকা শহর অভিমুখে যাচ্ছে। আর মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের ভরসা হয়ে উঠছে পল্লী চিকিৎসক আর হাতুড়ে ডাক্তার। কেউ কেউ আবার চিকিৎসাসেবা নিতে অজ্ঞতাবশত প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত ১ হাজার চায়না শ্রমিক। এমনকি কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রে আগত কোনো পর্যটক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের এমন দুর্ভোগ লাঘবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। জানা যায়, উপজেলায় মোট চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৩৬। এরমধ্যে উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে ২১টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২/৩ জন, কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে ৬টি পদের সবক’টি পদ শূন্য, মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১টি পদের ১টি পদ শূন্য এবং ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৮টি পদের ৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩টি পদের ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ৬ জন এবং স্বাস্থ্য সহকারী ৩৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৩ জন। তন্মধ্যে আবার ১ জন রয়েছে ডেপুটেশনে।
সূত্রটি আরও জানায়, কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে ৭ জন চিকিৎসক যোগদান করলেও তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলায় চিকিৎসাসেবা পেতে দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ। এমন অবস্থার মধ্যেও হাই তদবিরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ডেপুটেশনে রয়েছে ডা. মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে ডা. সৈয়দ আশিকুর রহমান। শ্রান্তি বিনোদনের ছুটিতে রয়েছে ডা. তানজিলা হাসির তৃষা এবং মাতৃত্বজনিত ছুটিতে ডা. পলি সাহা।
এদিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছে স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারগুলো। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক যাতে পদায়ন করা না হয় সেজন্য তারা লবিং তদবিরও করছেন। এমনও গুঞ্জন রয়েছে শিশু, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ রায় কলাপাড়ায় যোগদানের পরপরই হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বাড়ায় তদবির করে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে অন্যত্র। কলাপাড়া হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে অল্পসংখ্যক দরিদ্র রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সক্ষমতা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জেএইচ খান লেলিন বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কাজ ফেলে আমি নিজে এখন সকাল ৭টায় হাসপাতালের বহির্বিভাগের রুমে বসি। ইমার্জেন্সিতে রোস্টার করে দুইজনকে বসাতে হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন তিনি।