দেশ বিদেশ
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা
বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার মানুষ। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটে গত চার সপ্তাহ ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদগুলোও ফাঁকা রয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩০ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইউনিয়ন থেকে পদায়িত হয়ে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। হাসপাতালে গাইনি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা, অ্যানেস্থেসিয়া ও অর্থোপেডিক জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের ১০টি পদ থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে একজন চিকিৎসকও নেই। যদিও হাড়জোর বিশেষজ্ঞ পদে একজন চিকিৎসক কাগজে-কলমে নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি কোনোদিন এখানে আসেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি পেশনে ময়মনসিংহে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ৩ জন চিকিৎসক বিনা অনুমতিতে এখনো কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। ৫০ শয্যা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে এই হাসপাতালটিতে ডাক্তারের সংখ্যা পরিপূর্ণ ছিল। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকগণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও পেশন নিয়ে এবং বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার মানুষ। এ ছাড়াও ২টি স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছেন একজন, ৭টি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে মাত্র একজন কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া ৩৫টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের মধ্যে ২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কেউ কর্মরত নেই। এমএলএসএস-এর ৪টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন। চিকিৎসক সংকটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুল কবীর প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজেই বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের গভীর রাত পর্যন্ত রোগীদের শয্যায় গিয়ে চিকিৎসাসেবা এবং ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন বলে রোগীরা জানান।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুল কবীর চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায় ৩ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তার পরেও আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, চিকিৎসক-কর্মচারী সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে।