দেশ বিদেশ
কয়েকশ’ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত
পঞ্চগড়ে প্রতি বছর ভাঙছে নদীর তীর
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
শুষ্ক মৌসুমে পঞ্চগড় জেলার নদীগুলোতে থাকে না পানি। মরা খালে পরিণত হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে নদী ভাঙনের কারণে মানুষ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বছরের পর বছর ধরে উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় নদীগুলোর ৫০টি পয়েন্টে ৩১ দশমিক ৬৬৫ কিলোমিটার এলাকার কয়েকশ’ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ বিভিন্ন অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে।
তথ্যমতে, পঞ্চগড় জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া, তালমা, ঘোরামারা, চাওয়াই ও পাথরাজ নদী। এসব এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৬৫ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন জরুরি। এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। এতে আনুমানিক ৩ হাজার হেক্টর জমিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব। নদী সংরক্ষণ ও খনন কাজ করা হলে প্রকল্প এলাকার প্রায় ২ লাখ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ নদী ভাঙনমুক্ত করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। এছাড়া মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এদিকে, নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ খনন কাজে কোনো সফলতা আসেনি। ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখাসহ সেচ সুবিধা ও মাছ চাষ করার জন্য ১০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭টি নদী পুনঃখনন করা হলেও দু’বছরের ব্যবধানে নদীগুলো আবারো শীর্ণ মরা খালে পরিণত হয়েছে। খনন করা প্রতিটি নদীতে এখন বোরো ধানের চাষ করা হচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলার ৭টি নদী ও একটি খালের মোট ১৭৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পুনঃখননের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যাতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রধান করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার, পাথরাজ নদী ২০ কিলোমিটার, বুড়িতিস্তা নদী ২০ কিলোমিটার, চাওয়াই নদী ২০ কিলোমিটার, ভেরসা নদী ১০ কিলোমিটার, তিরনই নদী ৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার ও রসেয়া নদী ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ করা হয়। এ ছাড়া, বড়সিঙ্গীয়া খাল ৬ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। তবে নদীগুলোর পুরো জায়গা খনন করা হয়নি। কোনো নদীর একদিক ও কোনো নদীর কিছু অংশ খনন করা হয়। খননের সময় দেখা যায়, পাইপের সাহায্যে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তুলে নদীর ধারেই রেখে দেয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ওই বালু আবার নদীতে গড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া উজান থেকে পানির চাপে আসা বালু দিয়ে খনন করা স্থান ভরে যায়। বর্তমানে যে দিক দিয়ে পানির প্রবাহ রয়েছে সেখানে হাঁটু পানি বা তার কম পানি রয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, পরিকল্পিতভাবে নদ-নদীগুলোর পুনঃখনন কাজ না হওয়ার জন্য কোনো লাভ হয়নি। পুনঃখননের সময় নদীর বালুগুলো ধারেই রেখে দেয়ায় আবার সেই বালু নদীতে গিয়ে ভরাট হয়েছে। খননের সময় নদীর বালুগুলো যদি দূরে নিয়ে রাখা হতো তাহলে হয়তো কিছুটা লাভ হতো। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীগুলো খনন করা হলেও সুফল আসেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, দু’জেলার নদীসমূহের টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নামে ৩১ দশমিক ৬৫৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ও ১৭ দশমিক ৪২ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের জন্য ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে যে বছরে ১০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী খননের কাজ হয়েছে তখন আমি ছিলাম না। কাজ শেষ হওয়ার পরে দায়িত্ব নিয়েছি।